জিবিনিউজ24ডেস্ক//
বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পশ্চিমামুখী ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভরতায় বহুমুখী করার সময় এসেছে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আরও যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব।
তিনি বলেন, কোভিড আছে, ইউক্রেন যুদ্ধ বা সংকট মুহূর্ত চলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু আছে তারপরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য পূর্বের যে দেশগুলো আছে; আসিয়ান বা কোরিয়া বা জাপান এবং চায়নাসহ এদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বর্তমানে আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো সেগুলোর সমাধান খোঁজা দরকার। আমাদের যে নির্ভরতা পশ্চিমামুখী, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু সেটাকে এখন বহুমুখী করার সময় এসেছে। সেক্ষেত্রে থাইল্যান্ড, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য যে দেশগুলো আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করি।
পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রগতি সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিবের ভাষ্য, এদের সঙ্গে উন্নতি যতটা আমরা করতে চেয়েছি ততটা করা যায়নি। প্রগ্রেস যতটা আমরা করতে চেয়েছি ততটা করা যায়নি। তবে এটাও ঠিক যে আমাদের একেবারে দেরিও হয়ে যায়নি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবেও যথেষ্ট সাড়া রয়েছে।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের ৫০ বছর সম্পর্ক : সম্ভাবনা এবং আগামীর পথচলা’ শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে মাসুদ বিন মোমেন স্বাধীনতার পরের বছর থাইল্যান্ড কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করেন। তিনি বন্ধুপ্রতিম দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশংসা করেন। মাসুদ বিন মোমেন দুই দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি এ অঞ্চলে এবং এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উভয় দেশের যৌথ অঙ্গীকার ও সহযোগিতার প্রসঙ্গও টেনে আনেন।
পররাষ্ট্রসচিব বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এশিয়ার দেশগুলোর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সমস্যা সমাধানে এশিয়ার দেশগুলোকে এক হতে হবে। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে, এসময়ে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংহতির প্রয়োজন।
মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এবং আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার হতে জোট সদস্য রাষ্ট্র থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চান। তিনি দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আসিয়ানকে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে থাইল্যান্ডের কানেক্টিভিটি আরও বাড়াতে কোস্টাল শিপিং চালুর বিষয়ে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাজমুল হুদার সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্যের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। থাইল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যে আমরা সমীক্ষা করছি। আশা করছি, ভবিষ্যতে এটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
কানেক্টিভিটি ওপর জোর দিতে গিয়ে থাই রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মানুষের মধ্যে অনেক দিক থেকে মিল রয়েছে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে আরও যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আমরা চট্টগ্রামের সঙ্গে ব্যাংককের কোস্টাল শিপিং চালু করতে পারি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আসিয়ানে সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের সদস্য পদে থাইল্যান্ডে সমর্থন রয়েছে। তবে বাংলাদেশকে আসিয়ানের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। আমরা খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
সেমিনারে চেয়ার হিসেবে সমাপনী বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস। এছাড়া সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, বিস চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন ও বিডার পরিচালক (ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যান্ড রেগুলেটরি রিফর্ম) জীবন কৃষ্ণ সাহা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন