রাজু আহমেদ।কলামিস্ট। জিবি নিউজ ||
দল-মত-ছেলছেলা নির্বিশেষে এ ব্যাপারে কারোই দ্বিমত ছিল না যে, এ গ্রহের সবচেয়ে বড় ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির মাথায় বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মুকুট উঠুক। তবে অনেকেরই আপত্তি ছিল, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ দেয়া যাবে না! ফ্যালাসি এড়িয়ে বলতেই হচ্ছে, বিশ্বকাপ ট্রফি তো দেওয়া কিংবা নেওয়ার বিষয় নয়। এটাকে খেলে জয় করতে হয় এবং সেটা আর্জেন্টিনার ফুটবল দল অতীব সুনিপুন স্বাক্ষরতায় করে দেখিয়েছে। দুঃখ হচ্ছে ফ্রান্সের এমবাপ্পের জন্যেও, কেননা দীর্ঘ ছাপ্পান্ন বছর পরে ফাইনাল ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে হ্যাট্রিকসহ ৪ গোল দেওয়ার পরেও জয় না পাওয়ার যন্ত্রনা। তবে ২৪ বছরের এমবাপ্পের মধ্যে যে গতি, দক্ষতা আর ক্ষমতা দেখা গেছে তাতে তিনি যখন ৩৬ বছরে পৌঁছবেন তখন কত দূর যাবেন তা আপাতত আন্দাজ করা মুশকিল।
৩৬ বছরের কথা যেহেতু এসেছে তাই ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ে তাদেরকে আবারও উষ্ণ অভিনন্দন। আসলে গতির বিরুদ্ধে নান্দনিকতার জয় দেখেছে গোটা বিশ্ব। তবে শুধু ফলাফলটুকু বাদ দিলে আপনাকে অবশ্যই ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখতে হবে। ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে এমন কামব্যাকের ইতিহাসের স্বাক্ষী বিশ্ব ফুটবল খুব কম সংখ্যকবারই হতে পেরেছে। তাছাড়া আর্জেন্টাইন দলের প্রাপ্ত প্রথম পেনাল্টিতে কিছুটা বিতর্ক তো থেকেই যাচ্ছে। তবে তর্ক থাকছে না; সেটা জয়ের আনন্দ আর পরাজয়ের অশ্রুতে মিলে একাকার হয়ে গেছে।
কেবল উম্মাদ ও উগ্রপন্থী সমর্থক ছাড়া সবাই প্রতিযোগিতপূর্ণ উত্তেজনাকর ফুটবল ম্যাচ উপভোগের অপেক্ষা করে। মনে হয়, বিশেষ দলের অন্ধত্বপূর্ণ সমর্থণ কখনোই এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করে না; বরং উপভোগের ওপর প্রধান্য বিস্তার করে। বাংলাদেশের কিছু তরুণদের জন্য দুঃখ হয়। এরা শিল্পকে যুদ্ধাংদেহী আবরণ দিয়েছে। এখানে দল সমর্থনকে কেন্দ্র করে জীবন হারানো এবং দলাদলিতে আহতের সংখ্যাও নেহায়েত মামুলি নয়। আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তায় সুখী/খুশি হওয়ার ক্ষেত্র দিন দিন সংকীর্ণ হওয়ায় আমরা দূরবর্তী সুখে নিজেদেরকে ভেজাই, ডোবাই। অতপর পোড়াই। আত্মতৃপ্তি আনি। এটা পথ হিসেবে বিপথ নয় কিন্তু আমাদের প্রকাশ-প্রচার ঝুঁকিপূর্ণ। নয়তো এমন দাঙ্গার পরিস্থিতি এবং পুলিশ মোতায়েনের মত ঘটনার উদ্রেক হবে কেন?
আর কয়েকঘন্টার মধ্যেই আমাদের উত্তেজনা পারদ চুঁইয়ে আসবে। কিছু মানুষের উম্মাদনায় ০৪ বছরের জন্য ভাটির টান লাগবে। ২৬ এর বিশ্বকাপে আমাদের অনেকেই বলতেই পারবো না যে, ২২ এর বিশ্বকাপ কারা জিতেছিল? আমরা সুন্দরকে সুন্দরের জায়গায় রাখি। বিতর্ক যেন দ্বন্দ্বে রূপায়িত না হয়। দিন শেষে আমরা আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ভুলে যাব। আমাদের চিত্তের নৃত্যের জন্য প্রয়োজন শৈল্পিক ফুটবল, প্রতিযোগীতার লড়াই এবং উপভোগের খোরাক। সেটা আমরা কোরিয়া-জাপান থেকেও পেতে পারি। অস্ট্রেলিয়া-মরক্কোও আমাদের কম তৃপ্ত করেনি বোধহয়? নয়তো আমাদের কেবল নিজ সমর্থিত দলগুলোর খেলা উপভোগ করার কথা ছিল! সেটা বোধহয় আমরা করিনি!
ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে কাতার। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি উম্মাদনা ছড়িয়েছে বাংলাদেশ। আগামী সহস্রবছরের জন্য সোনালী ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে লিওনেল মেসি। আলভারেজ, মার্টিনেজদের আমরা বেশিদিন মনে রাখবো না; ইতিহাসও রাখেনি। পেলে এবং ম্যারাডোনাকে এসিস্টকারী কারা ছিল সে নাম আমরা আজ আর মনে রাখতে পারিনি। তবে এমবাপ্পেকেও মনে রাখতে হবে। বিদায়ের আগে এইছেলেটা বিশ্ববাসীর কাছে তাকে চিরস্থায়ীভাবে মনে রাখার জন্য অনেক কিছুই করে যাবে বলে বিশ্বাস।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন