জিবিনিউজ24ডেস্ক//
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে ওআইসি পিইউআইসি’র কার্যকরী ভূমিকা কামনা করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের স্পিকারের কার্যালয়ে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বাংলাদেশ সফররত ‘ওআইসি’র ‘পিইউআইসি’ প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এ সময় ইরানের সংসদ সদস্য আবুল ফজল আমই, উগান্ডার সংসদ সদস্য বাসির লুবেগা সেম্পা, পিইউআইসি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ খৌরাইচি নিয়াজ, পিইউআইসি ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আলী আজগার মোহাম্মাদি সিজানি, এক্সপার্ট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আমির আব্বাস ঘাসেমপুর, প্রতিনিধিদলের সভাপতি প্রফেসর ডক্টর ওরহান আটালে, লেজিসলেটিভ এক্সপার্ট রেজাক তাভলি, সেক্রেটারি অব ডেলিগেশন মুসতাফা ফাতিহ বায়দার ও ডিরেক্টর অব পিইউআইসি জাহিদ হাসান কুরেশি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে যে মানবিকতা ও বদান্যতা দেখিয়েছেন তা বিশ্ববাসীর কাছে একটি উদাহরণ। বিশ্ব দরবারে সকল মহলে প্রশংসিত হয়ে তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গানিধন শুরু হলে দফায় দফায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে ক্ষুদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এরপরেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সহায়তায় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকার নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেছে। রোহিঙ্গাদের নিজস্ব জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষার্থে ও বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক বিবেচনায় তাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন জরুরি। রোহিঙ্গা নারী, শিশুদের ওপর অমানবিক অত্যাচার, তাদের মানবেতর জীবনযাপন পরিস্থিতি ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে ওআইসি পিইউআইসি-র কার্যকরী ভূমিকা কামনা করেন স্পিকার।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশ সফররত ওআইসি পিইউআইসি-র প্রতিনিধিদলের সভাপতি প্রফেসর ড. ওরহান আটালে বলেন, সমগ্র বিশ্বে মুসলিম মাইনরিটি ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী শরণার্থীদের মানবাধিকার সংরক্ষণে ওআইসি পিইউআইসি কাজ করছে।
কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে প্রতিনিধিদল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
পিইউআইসি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ খৌরাইচি নিয়াজ বলেন, সমগ্র বিশ্বে রোহিঙ্গা ইস্যু বর্তমানে একটি আলোচিত ও মানবিক বিষয়। ওআইসি পিইউআইসি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সব রকম মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার। তাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বৈশ্বিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এই জটিল সমস্যা সমাধানে তারা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ইরানের সংসদ সদস্য আবুল ফজল আমই বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে, তা দৃষ্টান্তমূলক। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া তাদের মানবাধিকার।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে তাদের যথাযথ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
উগান্ডার সংসদ সদস্য বাসির লুবেগা সেম্পা বলেন, বাংলাদেশের আয়তন ও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান একটি অনুসরণীয় মানবিক ঘটনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে এই ঘটনা প্রশংসিত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর সুষ্ঠু সমাধান চায়। তারই অংশ হিসেবে পিইউআইসি’র এই কমিশন কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে যথোপযুক্ত উদ্যোগ নিবে।
প্রতিনিধিদলের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে স্পিকার বলেন, ওআইসি পিইউআইসি প্রতিনিধিদলের এই সফরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা উৎসাহ পাবে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে রিপোর্ট তৈরি করে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপন ও এর আশু সমাধানে প্রতিনিধিদলকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান স্পিকার।
এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন