জিবিনিউজ24ডেস্ক//
প্রায় ২৫০ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক দাসপ্রথায় জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করে এই প্রথম ক্ষমা চেয়েছে নেদারল্যান্ডস। সোমবার ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে ঔপনিবেশিক আমলের এই অপরাধের দায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। একই সঙ্গে দাসপ্রথাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
বিদেশি উপনিবেশগুলোতে ইউরোপীয়দের দাসপ্রথার অবসানের প্রায় ১৫০ বছর পর নেদারল্যান্ডস এই ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে।ইউরোপের এই দাসপ্রথা ছড়িয়ে ছিল সুরিনাম থেকে শুরু করে ক্যারিবীয় অঞ্চলের কুরাকাও এবং আরুবার মতো দ্বীপ ও পূর্বের ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত।
সোমবার দ্য হেগে দেওয়া এক বক্তৃতায় নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী রুটে বলেছেন, ‘আজ ডাচ সরকারের পক্ষ থেকে আমি ডাচ রাষ্ট্রের অতীত কর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’
তিনি বলেন, আমরা আজ এখান থেকে দাসপ্রথাকে স্পষ্ট ভাষায় ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসাবে স্বীকৃতি এবং নিন্দা জানাতে পারি।
ক্ষমা প্রার্থনার ওই অনুষ্ঠানের আগে ডাচ মন্ত্রীরা দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের সাতটি সাবেক উপনিবেশ ভ্রমণ করেন। গত সপ্তাহে সুরিনামে আনুষ্ঠানিক এক সফরের সময় নেদারল্যান্ডসের অর্থমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী সিগ্রিড কাগ বলেছিলেন, দাসপ্রথায় সংশ্লিষ্টতার দায় মেটাতে আগামী বছরের ১ জুলাই আরেকটি অবিশ্বাস্য রকমের ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’র প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ডাচ দাসত্বের শিকার লোকজনের বংশধররা সেই সময় সুরিনামে ‘কেটি কটি’ (শৃঙ্খল ভাঙা) নামে দাসত্ব থেকে মুক্তির ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। কিন্তু সুরিনামের এই পরিকল্পনা ঘিরে ইতোমধ্যে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং দাসত্বের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত কিছু দেশ এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছে, নেদারল্যান্ডসের এই বিষয়ে পরামর্শ করাটা ঔপনিবেশিক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
তবে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেছেন, সঠিক মুহূর্ত বেছে নেওয়া একটি ‘জটিল বিষয়’। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট একটি সময়, নির্দিষ্ট একটি শব্দ, নির্দিষ্ট একটি জায়গা সবার জন্য সঠিক হবে না।
ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকে ডাচরা তাদের সাম্রাজ্য এবং সংস্কৃতি বিস্তারের ‘সোনালী যুগে’ ব্যাপক অর্থায়ন করেছিল। ওই সময় প্রায় ৬ লাখ আফ্রিকানের বেশিরভাগকে দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে দাস হিসেবে পাঠিয়েছিল তৎকালীন ডাচ শাসকরা।
ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের রমরমা বিস্তারের সময় সুরিনাম, ক্যারিবীয় দ্বীপ কুরাকাও, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো উপনিবেশের অধিকারী ছিল নেদারল্যান্ডস। আর এশিয়ায় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দাস ব্যবসার শুরু করেছিল সপ্তদশ শতকে।
গত কয়েক বছরে নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত দুই চিত্রশিল্পী রেমব্রান্ট এবং ভার্মির আঁকা ডাচ সোনালী যুগের বিভিন্ন ছবি ঔপনিবেশিক বর্বরতার বিতর্ক উসকে দিয়েছে। আর এই বিতর্কে জ্বালানি জুগিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন।’ এই আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই ডাচ সমাজের বর্ণবাদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
আমস্টারডাম, রটারডাম, দ্য হেগ এবং ইউট্রেচট শহর থেকে ঔপনিবেশিক আমলের দাস ব্যবসার দায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে নেদারল্যান্ডসের সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে অতীতে এই ক্ষমাপ্রার্থনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দাসত্বের সময়কাল অনেক পেছনে এবং যেসব দেশে ডানপন্থীরা শক্তিশালী রয়েছে, ক্ষমা চাওয়া হলে সেসব দেশে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।
তবে প্রচণ্ড চাপের মুখে অতীতের অবস্থান থেকে মার্ক রুটে সরে দাঁড়ালেও তা সবাইকে খুশি করতে পারেনি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন