সুনামগঞ্জে হাঁস পালনে ঝুকেছে ৩ হাজার যুবক, প্রয়োজন সরকারী সহযোগীতা

মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ||

সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তৃর্ণ হাওর এলাকায় দিনদিন বেড়েই চলেছে হাঁসের খামারের সংখ্যা। অসহায় বেকার যুবকরা কোথাও কোন কাজ না পেয়ে অবশেষে ধার-দেনা করে, কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজ উদ্যোগে তৈরি করছে হাঁসের খামার। তাদের স্বপ্ন হলো বেকারত্ব দূর করে নিজেকে প্রতিষ্টিত করা। আর সেই লক্ষে হাঁস লালন-পালনে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার প্রায় ৩হাজার যুবক।
জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৩৫৮টি হাঁসের খামার। এছাড়া এজেলার ছাতক উপজেলায় রয়েছে ৩২৩টি, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৩১৫টি, দিরাই উপজেলায় ২৯৫টি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৯৫টি, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় ২৮১টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৮০টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৩৫টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৭৫টি, শাল্লা উপজেলায় ১৫৮টি ও তাহিরপুর উপজেলায় ১৫৫টি খামারসহ মোট ২ হাজার ৮৭০টি হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় ২৭লাখ ৩০হাজার ৪৪২টি হাঁস রয়েছে। প্রতিবছর এসব হাঁস থেকে ২৭ কোটি ৫৫ লাখ ১১হাজার ১৮৬টি ডিম পাওয়া যায়। তবে সুনামগঞ্জ জেলায় ডিমের চাহিদা রয়েছে ২৫ কোটি ৬৬লাখ ৬৯হাজার ৭১২টি। আর উদ্বৃত্ত থাকে ১ কোটি ৮৮লাথ ৪৭৪ হাজারেরও বেশি ডিম।


এব্যাপারে হাঁসের খামারীরা জানান- নিজ উদ্যোগে এসব হাঁসের খামার তৈরি করতে গিয়ে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাদের খামারের হাঁস মূলত হাওরের জলজ কীট-পতঙ্গ, ঘাস, শামুক ও ছোট মাছসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য খায়। আর বর্যাকালে হাওরের পানিতে এসব খাদ্য বেশি পাওয়া যায়। তখন হাঁস পালনে তেমন কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে হাঁস পালনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। জানুয়ারী মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হাঁসের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ে। এসময় হাওরে ধান চাষ হয়। তখন প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়ানো সম্ভব হয়না। তাই ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেয় খামারের হাঁস। তবে এপ্রিল মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত হাঁসের কোন ধরনের খাদ্যের সংকট থাকেনা। তখন খামারের হাঁস প্রচুর পরিমানে ডিম দেয়।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের হাঁসের খামারী মঞ্জু মিয়া বলেন- হাঁসের খামার করে আমরা এখন স্বাবলম্বী। তবে সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা পাইনি। একই উপজেলার রতনশ্রী গ্রামের সুজন মিয়া বলেন- অনেক দিন যাবত বেকার থাকার পর অনেক কষ্ঠ করে হাঁসের খামারটি তৈরি করেছি। সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগীতা পেলে হাঁস পালনে আরো লাভবান হতে পারতাম। বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার দূর্ঘাপুর গ্রামের মনির হোসেন বলেন- বর্যাকালে প্রাকৃতিক খাদ্য সহজে পাওয়া যায় তাই ওই সময় হাঁস পালনে কষ্ঠ কম হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পানি না থাকায় ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে হয়। তাতে অর্থ খরছ ও কষ্ঠের পরিমান অনেক বেড়ে যায়।
এব্যাপার সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান- জেলার সকল হাঁস খামারীদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দিলে হাঁস পালন করে বেকার যুবকরা আরো সফল হতো, তাদের জীবনমান আরো উন্নত করতে পারতো।
 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন