ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা ||
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনকে নৃশংসভাবে হত্যার ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। এদিকে, রায় ঘোষণার তিন বছরেও দণ্ডপ্রাপ্তদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহত সংসদ সদস্যের স্বজন ও এলাকাবাসী।
গত ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের মাস্টার পাড়ার তাঁর নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন তার ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী।এমপি লিটন হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
গত ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল আলোচিত এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ অক্টোবর। মামলার বাদী, নিহতের স্ত্রী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫৯ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর ঘোষণা করেন গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক।
রায়ে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আব্দুল কাদের খানসহ সাত আসামির সবার ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়। তাদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডা. আবদুল কাদের গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে লিটনের আগে সংসদ সদস্য ছিলেন। অন্যরা তার ঘনিষ্ঠ লোকজন।তারা হলেন, ডা. কাদেরের একান্ত সহকারী মো. শামছুজ্জোহা, গাড়িচালক আবদুল হান্নান, গৃহকর্মী মেহেদি হাসান, দূর সম্পর্কের ভাগ্নে ও বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া, সাবেক পোশাক শ্রমিক আনোয়ারুল ইসলাম রানা ও চন্দন কুমার রায়।
রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে ছয়জন উপস্থিত ছিলেন। একজন কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান। অপর আসামি চন্দন কুমার রায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত ১১ সেপ্টেম্বর সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকায় র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে মৃত্যুদণ্ডের আসামি চন্দন কুমার রায়।দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে এমপি লিটনের স্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশিদা জাহান স্মৃতি বলেন, মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন মনজুরুল ইসলাম লিটন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যত দ্রুত হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হবে, ততই তার আত্মাসহ আমাদের আত্মা শান্তি পাবে।
এমপি লিটনের বড়বোন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরুজা বারী বলেন, ছোট ভাই লিটনকে অকালেই হারিয়েছি। তাঁর খুনিদের দ্রুত ফাঁসির আদেশ কার্যকরের দাবি জানাই। তাঁর স্মরণে দলীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এমপি লিটন ছিলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের উন্নয়নের প্রতিক। খুনিরা তাকে তাঁর কাজগুলো শেষ করতে দেয়নি। তাঁর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স বলেন, বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালত আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আশা রাখি দ্রুতই আপিল নিষ্পত্তি এবং আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিচারিক আদালতের রায়ই বহাল থাকবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরুজা বারী বলেন, মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার তাঁর নিজ বাড়ি উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের মাস্টার পাড়ায় দোয়ার আয়োজন করেছে পরিবার। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ আয়োজনে দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন