ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফের হাতে নির্মম হত্যার শিকার বাংলাদেশের ফেলানীর হত্যা দিবস ৭ জানুয়ারিকে জাতীয়ভাবে ফেলানী দিবস পালন ও ভারতীয় দূতাবাসের সড়কের নাম "ফেলানী সড়ক" নামকরনের দাবি জানিয়েছেন আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর লাশ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। এই ছবি শুধু ফেলানীর লাশের ছবি নয়, এই ছবি কাঁটাতারে বিদ্ধ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব। এই ছবি বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতিকদের ভারত তোষণনীতির বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার।
কুড়িগ্রামে ফুলবাড়ী সীমান্তে বিনা উস্কানীতে বিএসএফ বাবার সামনে শিশু কন্যা ফেলানীকে হত্যাসহ সারা বছর সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের হাতে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যার উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, এই ঘটনা ভারতের আগ্রাসী চরিত্র। ভারতকে সীমান্ত আগ্রাসন, বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও ডাঃ শফিকুর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে। ফেনী নদী পানির ন্যায্য হিস্যার দাবী তোলার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আজ ৭ জানুয়ারী দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে ফেলানী হত্যা দিবসে সীমান্ত আগ্রাসন বন্ধের দাবীতে আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আগ্রাসন প্রতিেরাধ জাতীয় কমিটির আহবায়ক ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সংরক্ষন সংস্থার চেয়ারম্যান এডভোকেট জহুরা খাতুন জুইঁ।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সরকার দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। সীমান্তে বাংলাদেশী জনগণ স্বাধীন ভুখন্ডে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও কৃষি কাজ করতে পারছে না। ৭ জানুয়ারী ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা। শহীদ ফেলানী দিবসে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে এডভোকেট জহুরা খাতুন বলেন, ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি দাবি করে বলেন, তা না হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের বিএসএফ বিনা বিচারে হত্যা করে। যা অমানবিক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্ত্রহাতে ভারতীয় বিএসএফ বারবার ঢুকে পড়ে, যা আমাদের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লংঘন। সার্বভৌমত্বের লংঘন স্বাধীনতার লংঘন। ভারতের সঙ্গে চীন, মিয়ানমার, নেপালা, ভূটান, পাকিস্তানের পারস্পরিক সীমান্ত থাকলেও শুধু বাংলাদেশ সীমান্তে তারা অমানবিকভাবে সীমান্ত হত্যা করে। যা খুবই দুঃখজনক, ন্যক্কারজনক মানবতা বিরোধী অপরাধের শামিল।
ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারত তোষণনীতির কারণেই সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই ভারত সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হয় না তারা বাংলাদেশের মন্ত্রী, মনে হয় তারা ভারতীয় জনপ্রতিনিধি।
সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, দেশ এখন কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিসহ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির একক মদদে বর্তমান একদলীয় সরকার বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, সীমান্তে ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকা মানে হলো বাংলাদেশকে ঝুলিয়ে রাখা। ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় আজ দেশের রাজনৈতিক শক্তি-ব্যক্তি-গোষ্ঠী ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালন করছে। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর লাশ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। এই ছবি শুধু ফেলানীর লাশের ছবি নয়, এই ছবি কাঁটাতারে বিদ্ধ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব। এই ছবি বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতিকদের ভারত তোষণনীতির বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার।
বক্তব্য রাখেন আর্ন্তজাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়কারী মোস্তফা জামাল মজুমদার, জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, লেবার পার্টির মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান, জাগপা মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক রাসেদ খান, দেশ বাচাঁও মানুষ বাচাঁও আন্দোলনের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রিপন, নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ শামিম, মুসলিম সমাজের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আমিন, লেবার পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব আবদুর রহমান খোকন ও ছাত্রমিশন সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় সঞ্চালনা করেন আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব লায়ন নুরুজ্জামান হীরা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন