জিবিনিউজ24ডেস্ক//
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যখন অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে, সেখানে চীনসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে; এমনকি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রেও অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এগিয়ে আছে।
এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হয় অ্যাপেক। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামকে অ্যাপেকভুক্ত দেশের তালিকায় ধরা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ ও রেটিং প্রদানকারী মার্কিন সংস্থা মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিস সোমবার অ্যাপেকভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘করোনা মহামারির ধাক্কায় অ্যাপেক অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খানিকটা ধীর হয়েছে, কিন্তু ধারাবাহিকতা হারায়নি। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এই অঞ্চলে অর্থনীতির গতি সবচেয়ে শক্তিশালী।’
‘চলতি ২০২৩ সালে হয়তো গত বছরের তুলনায় কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে অ্যাপেক, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে।’
করোনা বিধিনিষেধ শিথিলের পর থেকে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামে প্রচুর সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটছে। সেই সঙ্গে ফের পুরোমাত্রায় শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ শিল্পোৎপাদন, সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন পরিষেবা সংস্থাও।
মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অ্যাপেক অঞ্চলেও মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে, কিন্তু ভোগ্যপণ্যের দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে এ অঞ্চলে। নিকট কিংবা দূর ভবিষ্যতেও মূল্যস্ফীতি লাগামহীন হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।’
মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। মূলত এই কারণেই চলতি বছর কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে অ্যাপেকভূক্ত দেশগুলো।
মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসের ধারণা অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালে বছর শেষে ১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে অ্যাপেক। ২০২২ সালে এই হার ছিল শতকরা ২ দশমিক ১ ভাগ।
সাম্প্রতিক কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের জন্য বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে খানিকটা ভোগান্তি হতে পারে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই।
কোনো দেশের ন্যূনতম অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বিদেশি মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারের মজুত থাকতে হয়।
মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিসের পর্যবেক্ষণ বলছে— দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অঞ্চলের কয়েকটি দেশ ব্যাতীত অন্যান্য সব দেশেরই তিনমাস তো বটেই, আরও বেশ কয়েক মাস আমাদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভের মজুত আছে।
যেসব দেশের কাছে তিনমাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো অর্থ আছে, সেগুলো হলো— বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন