জিবিনিউজ24ডেস্ক//
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলার ঘটনায় ক্ষোভের রেশ যেন দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। কট্টরপন্থি নেতা জাইর বলসোনারোর সমর্থকরা এই হামলা চালালেও দেশটির সদ্য সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ঘটনার সময় ব্রাজিলে ছিলেন না।
তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং ব্রাজিলে দাঙ্গার জেরে বলসোনারোর মার্কিন ভিসা বাতিল করে দেওয়ার দাবি উঠেছে। মার্কিন আইনপ্রণেতারা এই সংক্রান্ত আবেদন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে করেছেন। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর মার্কিন ভিসা বাতিল করতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে অনুরোধ করেছেন ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতারা। তারা বলেছেন, ব্রাজিলের নবনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় জড়িত কাউকে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
জাইর বলসোনারো গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বারবারই সেই ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন। চলতি মাসের শুরুতে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নতুন সরকারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে দেশত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। বলসোনারো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
এরপর ক্ষমতার লড়াই ঘিরে গত রোববার যেন বিক্ষোভের আগুনে বিস্ফোরিত হয় ব্রাজিল। আর এতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সমর্থকরা হামলা চালায় দেশটির কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস ও সুপ্রিম কোর্টে।
চরম ডানপন্থি এই সমর্থকরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একের পর এক জায়গায় হামলা চালায়। বিরোধী দলের এই হামলার তীব্র সমালোচনা করে একে ‘ফ্যাসিস্ট’ হামলা বলে আখ্যা দেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা।
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত রোববার ব্রাজিলের কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্টের সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্যালেসে হামলার ঘটনা ফের একবার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটলে হামলার কথাই মনে করিয়ে দিলো। যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘটনায় জড়িত ছিল ট্রাম্পের সমর্থকরা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আর জাজিরা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৬ জন আইনপ্রণেতাদের একটি দল ব্রাজিলের রাজধানীতে গত রোববারের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর মার্কিন ভিসা বাতিল করার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে।
এছাড়া ব্রাজিলের এই ঘটনায় মার্কিনভিত্তিক ‘উদ্দীপক’ কেউ এই হামলায় ভূমিকা রাখতে পারে কিনা সেটিও তদন্ত করার জন্য একইদিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন সকল ডেমোক্র্যাটরা আইনপ্রণেতা।
আইনপ্রণেতারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দুই বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সরকারি কর্মকর্তারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে বিপর্যস্ত করলে, ভুল তথ্য ছড়ালে এবং সহিংস চরমপন্থাকে উস্কে দিলে সেটির সরাসরি প্রভাব - তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয়ই - কী হতে পারে তা আমরা জানি।’
এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনপ্রণেতারা আরও বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাইর বলসোনারো বা অন্য কোনও সাবেক ব্রাজিলীয় নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয় যাতে তারা দায়িত্বে থাকাকালীন যে কোনও অপরাধের বিচার থেকে দূরে থাকতে পারে।’
একইসঙ্গে বলসোনারোর যুক্তরাষ্ট্র সফর আইনি বা বৈধ কিনা তা মূল্যায়ন করতে বাইডেন প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন আইনপ্রণেতারা। কারণ প্রেসিডেন্ট পদে না থাকা সত্ত্বেও সরকারি ভিজিট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন তিনি।
এদিকে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে বলসোনারোর উপস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের কাছ থেকে কোনও অনুরোধ পায়নি। তবে তমেন কোনও আবেদন বা অনুরোধ পেলে ‘দ্রুত’ সাড়া দেবে ওয়াশিংটন।
অবশ্য ব্লিংকেন বলেন, ‘কোনও ব্যক্তির ভিসার অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত নয়।’
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ব্রাজিলের নতুন নেতা লুলার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। তার ভাষায়, ‘আমরা ব্রাজিলের গণতন্ত্র এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে আছি।’
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ও প্রবীণ বামপন্থি নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা আগামী মাসে ওয়াশিংটন সফর করতে চলেছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন