জিবিনিউজ24ডেস্ক//
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাবেক কার্যালয় আইন বহির্ভূতভাবে সংরক্ষিত গোপন বিভিন্ন নথি থাকার ব্যাপারটি তদন্তে একজন বিশেষ কৌঁসুলিকে (কাউন্সেল) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ সেই কৌঁসুলির নাম রবার্ট হুর।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) মেরিক গারল্যান্ড সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়ি থেকে গোপন নথি উদ্ধারের ঘটনার বিস্তৃত তদন্তেও একজনকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। সেই সময়কার কিছু গোপন নথি সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক ‘পেন বাইডেন সেন্টার ফর ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড গ্লোবাল এনগেজমেন্ট’ থেকে। এই প্রতিষ্ঠানটি বাইডেনের মালিকানাধীন।
গত সোমবার বাইডেনের বিশেষ উপদেষ্টা রিচার্ড সাউবের বলেছেন, গত নভেম্বরে দপ্তরটি পরিষ্কার করার সময় প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা নথিগুলো পেয়েছেন। এসব নথি জাতীয় আর্কাইভের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জাতীয় আর্কাইভ এ ধরনের নথিগুলো সামলানোর কাজ করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, সরকারি পদ ও চাকরির মেয়াদ শেষ হলে কেন্দ্রীয় সরকারে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায় দাপ্তরিক নথি ও গোপনীয় দলিলাদি জমা দিয়ে দিতে হয়।
কিন্তু বাইডেনের পূর্বসূরী ও রিপাবলিকানপন্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ আইন ভঙ্গ করেছিলেন। কয়েক মাস আগে ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবন মার-এ লাগো থেকে বেশ কিছু গোপন নথি উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছিল; বাইডেন নিজেও এই ইস্যুতে একজন কট্টর সমালোচক ছিলেন।
কিন্তু এবার একই ঘটনা ঘটল তার সঙ্গেও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত এক কার্যালয় থেকে যেসব রাষ্ট্রীয় গোপন নথি উদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোতে আসলে কী আছে, তা তিনি জানেন না।
তবে এই ঘটনা বাইডেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে কালো ছায়া ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন; কারণ—বাইডেন ও ট্রাম্প দুজনই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজ নিজ দলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন।
এছাড়া বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেই রবার্ট হুর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ট্রাম্পের আমলে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিছু গোপন নথি বাইডেনের বাড়ির গ্যারেজ ও সংশ্লিষ্ট কক্ষে পাওয়া গেছে। পাশপাশি এ সংক্রান্ত তদন্তে সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
‘এই নথিগুলো যে অসাবধানতাবশত ভুল স্থানে রয়ে গেছিল এবং প্রেসিডেন্ট ও তার আইনজীবীরা যে ভুল ধরতে পেরে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন, বিস্তৃত পর্যালোচনায় তা উঠে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস,’ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন হোয়াইট হাউসের আইনজীবী রিচার্ড সাউবার।
তার করভেট গাড়ির পাশেই যে সরকারি গোপন নথি পড়ে আছে এমনটা প্রেসিডেন্ট জানতেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবই ছিল তালাবদ্ধ গ্যারেজে।
‘এমন নয় যে এগুলো রাস্তায় পড়ে ছিল। মানুষ জানে, আমি গোপন নথি ও জিনিসপত্রকে গুরুত্ব সহকারেই নিই,’বলেছেন তিনি।
রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মামলাগুলোতেই সাধারণত স্পেশাল কাউন্সেল নিয়োগ দেওয়া হয়; যিনি বিচার মন্ত্রণালয় থেকে কিছু মাত্রায় স্বাধীনতা পান।
ট্রাম্প এবং বাইডেন উভয়কেই এখন স্পেশাল কাউন্সেলের তদন্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে কাছাকাছি ঘটনা হলেও দুজনের ক্ষেত্রে অভিযোগ একই রকম নয়, বলছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
হোয়াইট হাউস বলছে, বাইডেনের অ্যাটর্নিরা সামান্য সংখ্যক গোপন নথি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প তার কাছে থাকা নথি জমা দেননি, শেষে গত বছরের অগাস্টে এফবিআই তল্লাশি চালিয়ে তার বাড়ি থেকে ১০০টির মতো গোপন নথি উদ্ধার করে। নথি সংক্রান্ত তদন্তে ট্রাম্প ও তার কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করেছেন কিনা, সে সম্পর্কিত প্রশ্নও আছে।
ট্রাম্পের কাছ থেকে পাওয়া গোপন নথি নিয়ে তদন্তে নিযুক্ত বিশেষ কৌঁসুলি ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হারের ফল উল্টে দিতে রিপাবলিকানদের চেষ্টার তদন্তেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তাছাড়া প্রেসিডেন্ট পদে থাকায় বাইডেনের জন্য আইনি ঝুঁকিও কম। তিনি যেকোনো গোপন নথির গোপনীয়তা তুলে নেওয়ার বিস্তৃত ক্ষমতা রাখেন, ওভাল অফিসের হর্তাকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ না আনার নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন অবিচল থাকায় বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচার সুযোগও বেশি তার।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়া ট্রাম্পের অবশ্য এ ধরনের কোনো রক্ষাকবচ নেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন