বাংলাদেশে অস্বাভাবিক মৃত্যু এখন আর আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো ব্যাপার নয়। বহুদিন থেকেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারে মৃত্যু নিয়মিতভাবেই ঘটে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। অবস্থা দেখে মনে হয়, যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাদেরকে বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেয়া আছে। এখানে লক্ষ করার বিষয় যে, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যতই অমানবিক হোক, এর পক্ষেও কিছু লোকের সমর্থন আছে। পুলিশি হেফাজতে হত্যা মানবাধিকার পরিপন্থি।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে সিলেটে রায়হান সহ পুলিশি হেফাজতে সংগঠিত সকল হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে জাতীয় জনতা ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি পুলিশি হেফাজতে রায়হান হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, প্রত্যেক সরকারের আমলেই সরকারসমর্থক বুদ্ধিজীবীরা এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে লেখেন না, মুখও খোলেন না! এজন্য দেখা যায়, বিএনপি সরকারের আমলে যে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা পুলিশি হেফাজতে ‘হার্ট ফেল’ করে মৃত্যু অথবা নির্যাতনের কারণে মৃত্যুর বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একই ঘটনা ঘটতে থাকলেও সে বিষয়ে চুপ থাকেন, যেমন বিএনপি সরকারের আমলে সরকারি নির্যাতনের ব্যাপারে বিএনপিসমর্থক বুদ্ধিজীবীরা চুপ থাকতেন। এটাই হল বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের নৈতিকতা ও মানসিকতার দৌড়।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ হেফাজতে আসামীর মৃত্যু এবং রিমান্ডের নামে নির্যাতন থেমে নেই। নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার ও রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে শুধু পঙ্গুই করা হচ্ছে না, নির্যাতন করে হত্যাও করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় ভিকটিমরা সুবিচারও পাচ্ছে না তদন্তকারীদের স্বজনপ্রীতির কারণে।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন হলেও প্রতিকার মেলে না। পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচার হয় না। কারণ, পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তভারও পুলিশকেই দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করা হয় না।
জাতীয় জনতা ফোরাম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকি তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্র রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক এহসানুল হক জসীম, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভুইয়া, আন্তর্জাতিক প্রবাসী মানবাধিকার ফাউন্ডেশন সভাপতি এইচ.এম. মনিরজ্জামান, নারী নেত্রী মিস চম্পা প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকি তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। এটি একটি মৌলিক অধিকারও বটে। কিন্তু এ দায়বদ্ধতা আমাদের সংবিধান আদৌ রক্ষা করতে পারছে না। যুগের পর যুগ শুধু ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রয়োগ হয়ে আসছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন