জিবিনিউজ24ডেস্ক//
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) কর ও আর্থিক অনিয়মের প্রসঙ্গে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলিকে কড়া জবাব দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম (এস.) জয়শঙ্কর।
জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে বর্তমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সূচি ছিল তার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে বিবিসির মুম্বাই ও নয়াদিল্লি শাখা কার্যালয়ে ভারতের আয়কর বিভাগের সাম্প্রতিক তল্লাশির ঘটনাটি সামনে আনেন ক্লিভারলি এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে বিবিসির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে দেশি-বিদেশি যত সংস্থা সক্রিয় আছে— তাদের সবাইকে অবশ্যই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।’
২০০২ সালের বহুল আলোচিত গুজরাট দাঙ্গায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে বিবিসি। তার এক সপ্তাহ পর, ২৪ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় সেই তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় পর্ব।
তথ্যচিত্রটিতে প্রধানত দেখানো হয়েছে, কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এমন অনেক কথাই অবশ্য ছবিটিতে বলা হয়েছে, যা নতুন নয়; কিন্তু যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এক জায়গায় এনে বিবিসি একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। আর তত্ত্বটি হলো, গুজরাট দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।
এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ভারতের বিচারব্যবস্থা তাঁকে সাহায্য করেছে, তা ও দেখানো হয়েছে দুই খণ্ডের সেই তথ্যচিত্রে।
তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভারতের রাজনীতি। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে সেটি প্রদর্শন করার সময় পুলিশি ধরপাকড় ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে।
চলমান এই বিতর্কের মধ্যেই গত ১৪ বিবিসির মুম্বাই ও দিল্লি শাখা কার্যালয়ে তল্লাশি চালান ভারতের কেন্দ্রীয় আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় এই দু’শাখার ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় নথি, কর প্রদান সংক্রান্ত রেকর্ড, কার্যালয়ের ল্যাপটপ এবং সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন জব্দ করে উভয় কার্যালয় সিলগালা করে দেন আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তারা।
পরে ভারতের কেন্দ্রীয় আয়কর দপ্তর থেকে বলা হয়, বিবিসির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কর ও তথ্য স্থানান্তর মূল্যে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে; এ কারণেই বিবিসি কার্যালয়ে এসেছে আয়কর দপ্তর। অভিযানের সময় সাংবাদিকরা যেন নিজেদের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ না করেন, সেই নির্দেশও দেন তারা।
দপ্তরের এই অভিযানকে ‘তল্লাশি’ বলে উল্লেখ করেছিল ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন—এটি রুটিন নিরীক্ষা ছিল, তল্লাশি নয়।
এই নিরীক্ষা বা তল্লাশির ৩ দিন পর, ১৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় আয়কর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিবিসি দিল্লি ও মুম্বাই শাখার বিরুদ্ধে কর অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন