জিবিনিউজ24ডেস্ক//
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয় রাশিয়াকে। আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে অর্থ লেনদেন নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ও রাশিয়া। কিন্তু প্রায় বছরখানেক সময়েও অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়ার সুরাহা করতে পারেনি ঢাকা-মস্কো।
বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাবিষয়ক আন্তঃসরকারি কমিশনের চতুর্থ অধিবেশনে সোমবার (১৩ মার্চ) তিন দিনব্যাপী ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-রাশিয়া। বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয়ে থাকবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে অর্থ লেনদেন প্রসঙ্গ।
বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে ব্যাংকিং লেনদেন আরও সহজ, বিকল্প এবং নিরাপদ অর্থ লেনদেনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অন্যদিকে একই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে মস্কো বাংলাদেশি ব্যাংকের সঙ্গে রাশিয়ার ব্যাংকের আর্থিক সংযোগ নিয়ে আলোচনা করবে। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষ অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়ায় সুরাহায় পৌঁছাতে চাইবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ঢাকার পক্ষে বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন।
আলোচনার টেবিলে কোন বিষয়গুলো থাকছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তিন দিনব্যাপী ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। সামগ্রিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এরমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে অর্থ লেনদেন বিষয়টি মূল ফোকাসে থাকবে।
ঢাকা-মস্কোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেশটির ৬৯টি জাহাজকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বৈঠকে আলোচনায় আনতে চেয়েছে মস্কো। কিন্তু ঢাকার পক্ষ থেকে এ বৈঠকে জাহাজের বিষয়টি আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত না করার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইআরডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, রাশিয়া রূপপুরের জন্য ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। রাশিয়ার ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে শুধু সুদ এবং এরপর থেকে সুদ ও আসল বছর বছর কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। ঋণের ৪৯৭ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। বাকি ৬৪১ কোটি ডলার।
বছরে দুটি কিস্তিতে রাশিয়াকে রূপপুরের জন্য অর্থ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে লেনদেন ঝামেলার কারণে এখন অবধি কোনো অর্থ রাশিয়াকে দিতে পারেনি বাংলাদেশ।
রূপপুরের ঋণ পরিশোধ নিয়ে বাংলাদেশকে গত বছরের ২৩ জুন প্রথম চিঠি দেয় রাশিয়া। ওই চিঠিতে দুই দেশের মধ্যে হওয়া আন্তঃসরকার ঋণচুক্তির (আইজিসিএ) ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দেয় দেশটি। এরপর ওই বছরের ১০ আগস্ট আরেকটি চিঠি দেয় রাশিয়া। এতে মার্কিন ডলার ও ইউরোতে লেনদেন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে রুবলে লেনদেনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এরমধ্যে বিষয়টি সুরাহার করতে বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেছে ঢাকা-মস্কো। বৈঠকে মস্কোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, চীনা মুদ্রা ইউয়ানে অর্থ লেনদেন করার। কিন্তু ইউয়ান থেকে রুবলে লেনদেন করতে গেলে দুবার ট্রানজেকশান ফিস দিতে হতো বাংলাদেশকে। সেজন্য মস্কোর প্রস্তাবে রাজি হয়নি ঢাকা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন