তাইওয়ানকে ছেড়ে চীনের হাত ধরছে হন্ডুরাস

 জিবিনিউজ24ডেস্ক//  

তাইওয়ানকে ছেড়ে চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে মধ্য আমেরিকান দেশ হন্ডুরাস। দেশটির প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রো বলেছেন, তিনি হন্ডুরান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক শুরুর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে হন্ডুরাসের এই পদক্ষেপে তাইওয়ানের মিত্রদের সংখ্যা আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুধবার (১৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য আমেরিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং চীনের সাথে সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার কথা বলেছিলেন। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নিজের অবস্থান পাল্টে তিনি তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার আশার কথা বলেছিলেন।

রয়টার্স বলছে, বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোকে তাইওয়ানের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখার অনুমতি দেয় না চীন। মূলত গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত এই দ্বীপটিকে নিজস্ব ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে চীন। আর হন্ডুরাস যদি তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক শেষমেষ ছিন্নই করে, তবে এই ভূখণ্ডটির আর মাত্রটি ১৩টি মিত্র থাকবে যাদের সঙ্গে তাইপেইয়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।

অবশ্য হন্ডুরাসের বিরোধী আইনপ্রণেতা টমাস জামব্রানো স্থানীয় টিভিকে বলেছেন, তাইওয়ানকে ছেড়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শুরুর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রোর এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে হন্ডুরাসের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার এবং হন্ডুরান অনেক পরিবারই যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করে।

অবশ্য তাইওয়ানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, তারপরও তাইপেইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক এবং অস্ত্র সরবরাহকারী হচ্ছে ওয়াশিংটন। আর এই বিষয়টিই চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উত্তেজনার উৎস হিসেবে রয়ে গেছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় টিভিকে হন্ডুরান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডুয়ার্ডো রেইনা বলেছেন, ‘আমাদের বিষয়গুলোকে খুব বাস্তবসম্মতভাবে দেখতে হবে এবং হন্ডুরান জনগণের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা কোথায় পাওয়া যাবে সেটিও খুঁজতে হবে।’

এদিকে হন্ডুরাসের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা হন্ডুরান সরকারের কাছে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তাদের সিদ্ধান্তকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করার এবং ‘চীনের ফাঁদে না পড়ার’ আহ্বান জানিয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন তাইওয়ানের একটি সূত্র জানিয়েছে, হন্ডুরাসের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য দ্বীপটি ‘সকল সম্ভাব্য উপায়ে’ চেষ্টা করবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। তবে মেক্সিকোতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং রান টুইট করে বলেছেন, এক-চীন নীতিতেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্য (রয়েছে)।

মূলত এক-চীন নীতি অনুযায়ী চীন এবং তাইওয়ান একই দেশের অংশ। ঝাং রান টুইটে বলেছেন, ‘এই নীতিটি গ্রহণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য হন্ডুরাসকে অভিনন্দন! আশা করি এটি পূরণ হবে।’

রয়টার্স বলছে, আগামী মাসে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েনের মধ্য আমেরিকায় পরিকল্পিত সফরের আগে হন্ডুরাসের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এলো। ওই সফরে তিনি গুয়াতেমালা এবং বেলিজ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাইওয়ানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ছিন্ন করে নিকারাগুয়া। সেসময় দেশটি চীনের প্রতি আনুগত্য পরিবর্তন করে এবং ‘তাইওয়ান চীনা ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে ঘোষণা দেয়।

অবশ্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট সেই সময়ে দেশগুলোকে তাইওয়ানের সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহিত করেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, নিকারাগুয়ার এই সিদ্ধান্ত জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে না কারণ দেশটির সরকার স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হয়নি।

অবশ্য হন্ডুরাসের সর্বশেষ পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

রয়টার্স বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে তাইওয়ান লাতিন আমেরিকার মিত্র প্যারাগুয়েকে হারাতে পারে। ওই সময়ে প্যারাগুয়েতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে এবং ওই নির্বাচনে বিরোধী দল জিতলে তারা চীনের সাথে সম্পর্ক গড়তে পারে।

লাতিন আমেরিকার এই দেশটির বিরোধী দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এফ্রেইন আলেগ্রে বলেছেন, প্যারাগুয়ে তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং চীনের সাথে সম্পর্ক উন্মুক্ত করবে। এর মাধ্যমে তিনি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সয়া এবং গরুর মাংস রপ্তানি বাড়ানোর আশা করছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন