জিবিনিউজ24ডেস্ক//
নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ১২০টির মতো আবেদন পড়েছে ইসিতে। এর আগে, সাতটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, যেসব আবেদন পড়েছে সেগুলো এখন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কতটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে তা নির্ধারণ করবে কমিশন।
এ বিষয় ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, রোববার (১৯ মার্চ) ছিল আবেদনের শেষ সময়। আমরা এখনো কম্পাইল করিনি। দুএক দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বলতে পারব।
সংসদীয় আসনের সীমানায় তেমন কোনো পরিবর্তন না এনে ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে ইসি। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টির আগের সীমানা হুবহু রেখে কেবল সাতটি আসনে নতুন গঠিত প্রশাসনিক এলাকাগুলোর নাম জুড়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে নতুন সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের নামই মূলত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার কোনো বিস্তৃতি হয়নি।
প্রাথমিক তালিকায় যে সাতটি আসনের পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো হলো— ময়মনসিংহ-৪, মাদারীপুর-৩, সুনামগঞ্জ-১, সুনামগঞ্জ-৭, সিলেট ১, সিলেট-৩ ও কক্সবাজার-৩ আসন।
ময়মনসিংহ-৪ আসন : বর্তমানে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নিয়েই আসনটি রয়েছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হওয়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে— সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা এবং সদর উপজেলা নিয়েই আসনটি হবে।
মাদারীপুর-৩ আসন : কালকিনি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ‘ডাসার’ নামে নতুন একটি উপজেলা সৃষ্টি হওয়ায় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে তালিকায়। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত নির্বাচনী এলাকা হবে— কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন। এক্ষেত্রে এলাকা আগের মতোই থাকছে।
সুনামগঞ্জ-১ আসন : ধর্মপাশা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে ‘মধ্যনগর’ নামে নতুন উপজেলা গঠিত হয়েছে। ফলে আগের এলাকার সঙ্গে নতুন করে মধ্যনগর নামটি যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৩ আসন : জগন্নাথপুর উপজেলা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত। তবে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নাম পরিবর্তন হয়ে এখন শান্তিগঞ্জ হয়েছে। এজন্য প্রস্তাব করা হয়েছে আসনটি গঠিত হবে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে।
সিলেট-১ আসন : সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও তিনটি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আগে আসনটি ছিল সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে। প্রাথমিক তালিকায় সদর উপজেলার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ১-২৭ ও ৩১-৩৯ নম্বর ওয়ার্ড যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সিলেট-৩ আসন : দক্ষিণ সুরমার দুটি ইউনিয়ন ও একটি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে আসনটিতে রয়েছে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা। প্রাথমিক তালিকায় সিটি করপোরেশনের ২৮-৩০ ও ৪০-৪২ এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কক্সবাজার-৩ আসন : সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ‘ঈদগাঁও’ নামে নতুন উপজেলা গঠন হয়েছে। এ আসনটি কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা নিয়ে গঠিত। এক্ষেত্রে প্রাথমিক তালিকায় ঈদগাঁও নামটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই প্রাথমিক তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি জানাতে ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয় ইসি। এতে ওই ১২০টির মতো আবেদন জমা পড়ে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, গাজীপুর, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলা থেকে এসেছে।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত ও সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল বর্তমান সীমানা বহাল রাখার আবেদন করেছেন।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওদুদ একটি ইউনিয়ন যুক্ত করে সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন করেছেন।
আবার জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও কয়েকটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, প্রাথমিক তালিকার ওপর যারা আবেদন করেছেন তাদের প্রত্যেকটি আবেদনের শুনানির জন্য সময় দেওয়া হবে। শুনানিতে আবেদন যৌক্তিক হলে তা গ্রহণ করা হবে।
সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ অনুযায়ী, ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদনে উল্লিখিত জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব বাস্তব বণ্টনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, জনসংখ্যাকে আমরা সবার পরে প্রাধান্য দিয়েছি। কেননা, জনসংখ্যা ভিত্তিতে সীমানা করতে গেলে কোনো কোনো জেলায় একটি করে আসন হবে। আর ঢাকার মতো বড় শহরে আসন আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতা ও ভৌগোলিক বিষয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আইনে ইসির গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা দেওয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও কমিশন দৈব দুর্বিপাক বা অন্য কোনো যুক্তিসংগত কারণ থাকলে সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এক্ষেত্রে সর্বশেষ নির্ধারিত সীমানার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের ইতিহাসে ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। সে সময় ১৩৩টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছিল এটিএম শামসুল হুদার কমিশন। এরপর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ৫০টি আসনে পরিবর্তন এনেছিল। তারা প্রস্তাব করেছিল ৮৭টি আসনে পরিবর্তন আনার।
২০১৮ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন ৪০টি আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করলেও শুনানির পর ২৫টি আসনে পরিবর্তন এনেছিল, যেগুলো পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের মতো করা হয়েছিল। আর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন সাতটি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করলেও আদতে এলাকার কোনো পরিবর্তন নেই। এক্ষেত্রে দাবি-আপত্তি পেয়ে শুনানিতে কোনো আসনের সীমানায় পরিবর্তন হলেই কেবল নতুন সীমানায় ভোট হবে কোনো কোনো আসনে। নয়তো আগের সীমানাতেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন