ফুরফুরে মেজাজে ট্রাম্প, করোনা ইস্যুতে এগিয়ে বাইডেন

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকেঃযুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একেবারেই দোরগোড়ায়। আর মাত্র দুই সপ্তাহের মতো বাকি। আসছে ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই নির্বাচনের দিকে। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে ১২১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা ডেমোক্র্যাট দলের জো বাইডেনের যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন, তা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু দুজনের মধ্যে কে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, তা অনুমান করা বেশ কঠিন। তবে বিভিন্ন জনমত জরিপ বলছে, বাইডেনের পাল্লাই ভারী। বিশেষ করে করোনা ইস্যুতে এগিয়ে গেছেন বাইডেন। তবে ট্রাম্পও এগিয়ে চলছেন সমানতালে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে ফুরফুরে মেজাজেই আছেন তিনি। পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা।  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং এ নিয়ে তার মন্তব্য ও কার্যকলাপে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে এগিয়ে যাচ্ছেন জো বাইডেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে কোয়ারেন্টাইনের কোনো নিয়ম না মেনে মাত্র তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। করোনা ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছেন। সিএনএনসহ বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, এই সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ট্রাম্প অন্তত ২০ শতাংশ মানুষের বিরাগভাজন হয়েছেন। যদিও রিপাবলিকান সমর্থকেরা আগামী ৩ নভেম্বর ট্রাম্প বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বীর রোগমুক্তি কামনা করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।  ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন এবং তার রানিংমেট কমলা হ্যারিসের করোনা নেগেটিভ হওয়ায় তারা নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। ১২ অক্টোবর বাইডেন ক্রিটিক্যাল সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত ওহাইও সফর করেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আনুষঙ্গিক কারণে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্সিয়াল বাতিল করেছে কমিশন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং কমলা হ্যারিসের মধ্যকার বিতর্ক কোনো পক্ষের জন্যই তেমন আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি।  এদিকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় নিজেকে করোনামুক্ত হিসেবে দাবি করে আবারও নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১১ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার দেহে ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। তার দেহে এখন আর কোভিড-১৯ নেই। ১২ অক্টোবর তিনি ফ্লোরিডায় সমাবেশ করেন। ওরল্যান্ডো রাজ্যের কাছাকাছি স্যানফোর্ড শহরে আয়োজিত বিশাল ওই নির্বাচনী সভায় অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পরেননি। সমাবেশে নিজের মাস্ক খুলে ফেলে ট্রাম্প বলেন, আমার বেশ ভালো লাগছে। করোনার পর আমার মধ্যে একটা ফুরফুরে ভাব চলে এসেছে। আমার মন চাচ্ছে ভক্তদের গিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি। ট্রাম্প বলেন, চীনের ভয়ংকর ভাইরাসকে তিনি জয় করেছেন। তিনি মনে করছেন, করোনার বিরুদ্ধে তার শরীর প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করতে পেরেছে। এর আগে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চিকিৎসক শন কোনলির দাবি, প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আর কোনো ঝুঁকি নেই। তবে ট্রাম্প করোনা নেগেটিভ হয়েছেন, এমন কোনো তথ্য তিনি দেননি।  অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটদের সকল যুক্তি-তর্ক এবং ওজর-আপত্তি উপেক্ষা করে সিনেট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনোনীত বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেটের কনফারমেশন হিয়ারিং শুরু করেছে। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ব্যারেটের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সুপ্রিম কোর্ট এবং উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অতীত প্রেসিডেন্টদের সকল রেকর্ড ভঙ্গে করবেন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক বিচারক নিয়োগকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃত হবেন। তেমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের ভারসাম্যও ব্যাহত হবে এবং কনজারভেটিভ ও লিবারেল জাস্টিসের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬-৩।  ১২১৬ প্রার্থী : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২৩০ বছরের ইতিহাসে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটিক দল দুটির বাইরের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মাত্র একবার। তিনি হলেন জর্জ ওয়াশিংটন এবং তিনিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। যিনি ছিলেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সুতরাং রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বাইরের কারও জেতার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। এমন বাস্তবতা জেনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অবিশ্বাস্য। ১২১৬ জন প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হতে ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন।  হিলারির বিতর্কিত ই-মেইল : সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হিলারি ক্লিনটন অফিশিয়াল পাবলিক কমিউনিকেশনের জন্য প্রাইভেট ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করেছিলেনÑএ অভিযোগ করে আসছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা। ১০ অক্টোবর কনজারভেটিভ হোস্ট রাশ লিমবার্গের রেডিও শোর এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এই জঘন্য অপরাধে সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারির কারাদণ্ড হওয়া উচিত। ট্রাম্প বলেন, হিলারি ব্যক্তিস্বার্থে কমপক্ষে ৩৩ হাজার ই-মেইল মুছে ফেলেছেন। ট্রাম্প বলেন, ই-মেইলগুলো যতই গোপনীয় হোক না কেন হিলারি তা মুছে ফেলতে পারেন না। ট্রাম্পের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও বলেছেন, তিনি কোনো না কোনোভাবে ই-মেইলগুলোতে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন। আর ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগেই সেগুলো প্রকাশ করা হবে। কারণ আমেরিকার জনগণের তা জানার অধিকার রয়েছে। পম্পেও বলেন, প্রাইভেট সার্ভারে ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন কোনোক্রমেই স্থান পেতে পারে না। হিলারির কখনো তা করা উচিত ছিল না। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে অনভিপ্রেত আচরণই বলা চলে। কোনো নেতাই এমন ধরনের কাজ করতে পারেন না। কোনো নেতাই এ ধরনের তথ্য বাইরে যেতে দেননি।  বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচনের আগমুহূর্তে হিলারির বিতর্কিত ই-মেইল প্রকাশ ডেমক্র্যাটিক প্রার্থী বাইডেনের ভোট লাভের পথে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন