জিবিনিউজ24ডেস্ক//
গুড ফ্রাইডে চুক্তির ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। উত্তর আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রে চার দিনের ঐতিহাসিক সফরের শুরেুতে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) শহরটিতে পৌঁছান তিনি।
পরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। বুধবার (১২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
উত্তর আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় তিন দশকের উত্তেজনা ও সহিংসতা বন্ধ করতে ২৫ বছর আগে ‘গুড ফ্রাইডে’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষ সেই সংঘাতের বলি হয়েছিলেন।
গত সোমবার সেই গুড ফ্রাইডে চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ তম বার্ষিকী ছিল। যদিও শান্তির বিরোধিতাকারী ছোট গোষ্ঠীগুলো এখনও কিছু বিক্ষিপ্ত সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবিসি বলছে, গুড ফ্রাইডে চুক্তির ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এই চুক্তির ‘অসাধারণ অগ্রগতি’কে স্বাগত জানিয়ে এসেছে হোয়াইট হাউস।
এদিকে বাইডেনের সফরকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারের বেশিরভাগ সময় ধরে বেলফাস্টে বিশাল নিরাপত্তা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। আর এই কারণে সফরকে সামনে রেখে শহরের কেন্দ্রের অনেক রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
মূলত উত্তর আয়ারল্যান্ডে গুড ফ্রাইডে শান্তি চুক্তির ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় যোগ দেবেন বাইডেন। এছাড়া সীমান্তের ওপারে দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডে তিনি তার আইরিশ পূর্বপুরুষদের শহরগুলোতেও যাবেন।
বাইডেনের এই সফর এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন এই অঞ্চলের রাজনৈতিক মতানৈক্য এবং প্রায়শই ভিন্নমতাবলম্বীদের হামলার ঘটনা শান্তিচুক্তির স্থায়ীত্বকে অনেকটা পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছে। সোমবার লন্ডনডেরিতে মিছিলের সময় মুখোশপরা যুবকরা পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। অবশ্য বাইডেনের এই সফর ঘিরে উত্তর আয়ারল্যান্ডে আগেই সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল।
এছাড়া প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে স্বাগত জানাতে মঙ্গলবার রাতেই বেলফাস্টে পৌঁছান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বুধবার বেলফাস্টের আলস্টার ইউনিভার্সিটিতে ভাষণ দেওয়ার আগে সুনাকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বাইডেন।
১৯৯৮ সালের ১০ এপ্রিল গুড ফ্রাইডে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেসময় চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তি তিন দশকের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান ঘটায়। অবশ্য চুক্তির সাফল্য সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য বিধি নিয়ে মতবিরোধের কারণে চুক্তিটি ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে।
নতুন বাণিজ্য বিধিমালার প্রতিবাদে গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে থাকার সমর্থক (ইউনিয়নিস্ট) প্রধান রাজনৈতিক দল সরকার থেকে সরে আসার পর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইনসভায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
শান্তিচুক্তি বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে বিক্ষিপ্ত সহিংসতাও বেড়েছে। গত মাসে ব্রিটেনের এমআই ফাইভ গোয়েন্দা সংস্থার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর আয়ারল্যান্ডে সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতেই সহিংসতা শুরু হতে পারে বলে সংস্থাটি আশঙ্কা করছে। এমনকি বাইডেনের সফরের সময়েও হামলার আশঙ্কা দূর করা যাচ্ছে না।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, উত্তর আয়ারল্যান্ড সফরের সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন গুড ফ্রাইডে শান্তিচুক্তির পর থেকে অগ্রগতিগুলো চিহ্নিত করবেন এবং এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করবেন।
এদিকে বুধবার দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডে যাবেন জো বাইডেন। সেখানে তিনি তার পূর্বপুরুষের সম্মান জানাবেন। এর পাশাপাশি আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল হিগিনসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন