দেশপ্রেমের বাতিঘরের বিদায়

রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।|

আমরা যারা ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে-একবার মরেই দেখি। ভালো যদি ৩০ জনে বলে তো গালির বন্যা বইয়ে দেবে বাকি ৭০ জন। জীবিত অবস্থাতেই কতশত গালি হজম করতে হচ্ছে, মা-বোনের গোষ্ঠী উদ্ধার শুনতে হচ্ছে অথচ ব্যতীক্রমী একজন ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী-অনন্য মহৎজীবন। ক্ষমতার বাইরের একজন মানুষ, যিনিআমৃত্যু বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতিকে অগ্রসর করার চেষ্টা করেছেন, সরল চোখে দেখেছেন সমাজ, সেই মানুষটি মারা গেলো অথচ কেউ তাঁর সমালোচনা-নিন্দা করছে না বরং সবাই কাঁদছে, শোকাভিভূত হয়েছে। মানবজীবন তো এমনই হওয়া উচিত। ধন্য এ জীবন ধন্য।

যুক্তরাজ্যের ভোগ-বিলাসী জীবনের সর্বোচ্চ চূড়া থেকে ১৯৭১ সালে একলাফে এসে দাঁড়ালেন যুদ্ধপীড়িত বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে যুদ্ধাহত মানুষের জীবন রক্ষায় প্রতিষ্ঠা করলেন “ফিল্ড হাসপাতাল”। চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির পরীক্ষা অংশগ্রহন না করে তিনি হয়তো প্রচলিত বড় ডিগ্রিধারী ডাক্তার হতে পারেননি তবে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের অন্তরে যে ছাপ ফেলেছেন তাতে তাঁর একজীবন বহুজীবনের চেয়েও দীর্ঘ। মানুষের ডাক্তার হিসেবে ঈশ্বরের পরের ধাপেই অবস্থান করেছেন আজীবন। 

 

দুঃখী মানুষের জীবনকে কীভাবে সম্মৃদ্ধ করা যায়, দেশের মানুষকে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে  চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া যায় সেই ব্রতেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতীয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।  আমাদের দেশের কতো মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলেই বিদেশে চিকিৎসা-চেকাপের জন্য যেতে মরিয়া হয়ে ওঠে/যায় অথচ মৃত্যু শয্যাতেও তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে রাজি হননি। আমরা সমাজ-রাষ্ট্রের অলিগলিতে বাহারি রকমের দেশপ্রেমিক দেখি, চেতনার ধারক-বাহক দেখি অথচ প্রকৃত দেশপ্রেমিকের জীবন্ত রুদ্রমূর্তি ছিলেন জনতার জাফরুল্লাহ। দেশপ্রেমের এমন জ্বলন্ত বাতিঘর এ জাতি আর কোথায়, কবে পাবে?

 

জমিদারের সন্তান হয়েও সাদামাটা জীবন-যাপন, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ ভাই-বোনদের দিয়ে দেওয়া এবং নিজের অর্জিত সম্পদ গণস্বাস্থ্য ও অন্যান্য চ্যারিটিতে দান করে দেয়ায় ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে স্থায়ী কোন সম্পদ নাই। অথচ বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের হৃদয়ই তাঁর স্থায়ী সম্পদ। সবার হৃদয়ে ভালোবাসায় তিনি আছেন, থাকবেন। ক্ষমতা ও সম্পদের এই লোভ-লালসার প্রতিযোগিতাপূর্ণ সময়ে তিনি কোন ব্যক্তিত্ব ও আদর্শে নিজেকে নির্লোভ রেখেছিলেন?-সে জ্যোতির খোঁজ এ প্রজন্মকে দীর্ঘ যুগ করতেই হবে। জাফরুল্লাহর শূন্যতা অপূরণীয়। তাঁর উদারতা ও মহৎকর্মই তাঁকে বাংলাদেশের হৃদয়ে সমুজ্জ্বল রাখবে। ৮২ বছর বয়সেও ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী যেভাবে সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন তা দেখে কিশোর ও যুবকরা তাঁকে ঈর্ষা করতেই পারে। 

নিশ্চয়ই মহান স্রষ্টা মানুষের হৃদয়ে গরীবের ডাক্তারের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ দেখেই তাঁকে উৎকৃষ্ট প্রতিদান দেবেন। 

[email protected]

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন