জিবিনিউজ24ডেস্ক//
গত ২০২২ সালে ইরানে মৃত্যুদণ্ডের হারে রীতিমতো উল্লম্ফণ ঘটেছে। গত বছরের পুরো সময়জুড়ে ইরানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬০০ জন নারী-পুরুষকে।
শতকরা হিসেবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মৃত্যুদণ্ডের হার বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। নরওয়ে ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস এবং প্যারিসভিত্তিক টুগেদার এগেইনস্ট দ্য ডেথ পেনাল্টি এক যৌথ বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর জেরে সৃষ্ট বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত বছর অন্তত ৫৮২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরানের প্রশাসন। সরকারি হিজাবনীতি ঠিকমতো মেনে না চলায় ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনিকে আটক করে ইরানের ধর্মীয় নীতি পুলিশ। পরে হেফাজতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাশার।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অচৈতন্য থাকায় হেফাজতে কী কী ঘটেছিল— বলতে পারেনি মাশা। তবে চিকিৎকসূত্রে জানা গেছে, মাথায় গুরুতর আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ।
মাশা আমিনির মৃত্যুর পর এক অভূতপূর্ব জনবিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। প্রথমদিকে বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল—মাশাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত নীতি পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা; কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়।
বিক্ষোভ দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় ইরানের ইসলামপন্থী সরকার। বিক্ষোভকারীদের গণহারে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সরকারবিরোধী জনসমাবেশগুলোতে প্রকাশ্যে গুলিও চালিয়েছে ইরানের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে গত বছর ইরানে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৫ শতাধিক মানুষ।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া ও তা কার্যকরের হিসেবে ইরান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২০২১ সালে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল ইরান, প্রথমে ছিল চীন।
ইরানে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী সরকারের প্রণয়ন করা আইনে মাদক সংক্রান্ত অপরাধ ও নাস্তিকতার অভিযোগে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুণ্ড; এবং দেশটিতে নিয়মিতই এই অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয়।
মৃতুদণ্ড কার্যকর হওয়া অভিযুক্তদের আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, দণ্ড কার্যকর করার আগে অনেক সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তার পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়না, এমনকি দণ্ড কার্যকরের পর আসামির মরদেহও হস্তান্তর করা হয়না অনেক ক্ষেত্রে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন