সোহাগকে ফিফার নিষেধাজ্ঞায় কী ভাবছে বাফুফে?

জিবিনিউজ24ডেস্ক//  

পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটি ও রমজানের দিন। ইফতারের আধঘণ্টা পরই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তোলপাড়। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে দুই বছরের জন্য ফুটবলের সব কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করেছে। ফিফার এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে মেঘ নেমে এসেছে।

গত এক দশকের বেশি সময় ফুটবলের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন আবু নাইম সোহাগ। সাম্প্রতিক সময় তার আচার-আচরণ নিয়ে ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির অনেকের মধ্যে অসন্তোষ ছিল প্রবল। পাশাপাশি আর্থিক বিষয় নিয়ে অসঙ্গতি প্রকাশ করেছিল ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত করে বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে এই শাস্তি দিয়েছেন।

আবু নাইম সোহাগের চারটি কারণে শাস্তি হয়েছে- এর মধ্যে মূলত আর্থিক বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এতে স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠে ফেডারেশনের আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব। এই বিষয়ে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী মন্তব্য করেননি। তবে বাফুফের ফিন্যান্স কমিটির কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশকৃত স্বাক্ষর ফাইলের ওপরেই ফিন্যান্স কমিটির অনুমোদন হয়। আর্থিক সব ডকুমেন্টস সাধারণ সম্পাদকই তৈরি করেন।’

বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতির সোহাগের শাস্তির বিষয় পর্যবেক্ষণ, ‘তার হয়তো প্রক্রিয়াগত কোনো ভুল ধরা পড়েছে ফিফার কাছে।’

 

ফুটবল ফেডারেশনের প্রয়াত সহ-সভাপতি বাদল রায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন বর্তমান সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী। সোহাগের ওপর ফিফার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তার মন্তব্য, ‘আমাদের নির্বাহী কমিটির সভায় এটি আলোচনা হবে। নির্বাহী কমিটির একজন হিসেবে আমি এই বিষয়ে বাফুফের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির দাবি জানাব। ফিফা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেও এই ব্যাপারে একটু খতিয়ে দেখা দরকার।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা এবং ফেডারেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার বিষয়। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমাদের সেটাই অনুসরণ করতে হবে।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আর্থিক অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম নিয়ে মিডিয়ায় প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়। যদিও বাফুফে কর্মকর্তারা সেটা অস্বীকার করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও আর্থিক বিভাগের লোকজন ফিফার হেড কোয়ার্টারে গিয়ে সাক্ষ্যও দিয়ে এসেছেন। এরপরও ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তারা এতে গুরুত্ব দেননি। আবু নাইম সোহাগ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আস্থাভাজন হিসেবে পুরো ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘সভাপতি মহোদয় সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল ছিলেন। আমরা নির্বাচিত কর্মকর্তা, এরপরও তিনি সাধারণ সম্পাদকে অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন। আজকের এই অবস্থার পেছনে সভাপতির অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাই কারণ।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচিত কর্মকর্তা হয়ে সভাপতিকে একটি বিষয় বলেছিলাম। তিনি সেটি সোহাগের সঙ্গে আলাপ করে জানাতে বলেন। এরপর থেকে ফেডারেশন বিমুখ হই।’

 

সোহাগের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও কোনো মন্তব্য করেননি।

২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ২০০৯ সালে বাফুফেতে পেশাদার সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ হয়। সাবেক ক্রীড়া সাংবাদিক আল মুসাব্বির সাদী পামেল ২০০৯ সালে নিয়োগ পাওয়ার দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময় কম্পিটিশন ম্যানেজার আবু নাইম সোহাগকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৩ সাল থেকে তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে এই বছরের জুনে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। বুয়েট থেকে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনায় স্নাতকোত্তর করা সোহাগের ফেডারেশনের চাকরি শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে।

ফিফার নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের পর আবু নাইম সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফিফার সিদ্ধান্ত আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।

বাফুফেকে সোহাগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানান ফেডারেশনের অন্যতম সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক। তিনি বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা খুব দ্রুতই সভা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন