জিবিনিউজ24ডেস্ক//
বাবার মাসিক রোজগার ছিল মাত্র ৭ হাজার রুপি। একটি স্টিলের কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করতেন তিনি। সেই স্বল্প রোজগার করা সুপারভাইজারের ছেলে এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। কথা হচ্ছে রিজওয়ান সাজনকে নিয়ে। তিনি দানিয়ুব গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের যত ভারতীয় থাকেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ধনী হিসাবে পরিচিতি রয়েছে তার।
বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে রিজওয়ানের সম্পত্তির পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা। দিন দিন তার ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে। আরব তথা সমগ্র পশ্চিম এশিয়ায় তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী।
পশ্চিম এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা এই রিজওয়ান কিন্তু ভারতীয়। ১৯৬৩ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম তার। সেখানেই বেড়ে ওঠা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের রিজওয়ান জীবনের লড়াই শুরু করেন বাবাকে হারানোর পর। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারান রিজওয়ান। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড়। ফলে সংসারের জোয়াল টানার ভার এসে পড়ে তার উপরেই।
রাস্তায় রাস্তায় ফেরিওয়ালার কাজ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি, কোনো কাজই প্রায় বাদ দেননি রিজওয়ান। তার ছোটবেলার দিনগুলো ছিল কঠিন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত। যার ফলশ্রুতি আজকের ১৮ হাজার কোটির সম্পত্তি।
একটি ছোট গাড়িতে মুম্বাইয়ের রাস্তায় প্রথম প্রথম কিছু দিন বই নিয়ে ঘুরতেন রিজওয়ান। সেই বই কেউ কিনতেন, কেউ আবার অবহেলায় এড়িয়ে যেতেন। বইয়ের গাড়িতে কখনো কখনো জুড়ত বাজি, দোলের রং কিংবা অন্যান্য টুকিটাকি।
রিজওয়ান মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ বিক্রি করেছেন দীর্ঘ দিন। গলফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দিন আনি দিন খাই অবস্থা ছিল আমাদের। জীবন খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিছুটা বাড়তি রোজগারের জন্য দুধ বিক্রি শুরু করেছিলাম।
বই আর দুধ বিক্রি করতে করতে ১৮-তে পা দেন রিজওয়ান। তার জীবনের মোড় ঘোরে ১৯৮১ সালে। চাচার কথায় সুদূর কুয়েতে পাড়ি দেন তিনি। সেখানে মাসিক ১৮ হাজার টাকায় শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। কুয়েতে দীর্ঘ ৮ বছর ছিলেন রিজওয়ান। প্রশিক্ষণরত সেলস কর্মী থেকে এই ৮ বছরে তিনি সেলস ম্যানেজারে পরিণত হন। কিন্তু ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হুসেন কুয়েত আক্রমণ করলে আবার বদলে যায় রিজওয়ানের জীবনের সমীকরণ।
কুয়েত ছেড়ে মুম্বাই ফিরে আসেন তিনি। কাজের খোঁজে সদা চঞ্চল এই তরুণ কিছু দিনের মধ্যেই ফের মধ্যপ্রাচ্যের টানে বিমানে চড়ে বসেন। এবার গন্তব্য দুবাই। সেখানে সাপ্লায়ার হিসাবে প্রাথমিকভাবে রোজগার শুরু হয়।
বহুতল নির্মাণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগান দিতেন রিজওয়ান। নিজের পরিশ্রম আর দক্ষতার মাধ্যমে ব্যবসায় সাফল্যের স্বাদ পান। নিজস্ব ব্যবসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এরপরেই।
১৯৯৩ সালে রিজওয়ানের হাত ধরে দানিয়ুব গোষ্ঠীর পথ চলা শুরু। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি থেকে বহুতল নির্মাণের ব্যবসা— সব ক্ষেত্রেই হাত পাকিয়েছে এই গোষ্ঠী।
রিজ়ওয়ানের নিজস্ব অফিসে তাঁর প্রথম কর্মচারী ছিলেন এক মহিলা। বর্তমানে তিনি সমীরা সাজন, রিজওয়ানের স্ত্রী। তার হাত ধরে যে সংস্থার সূচনা হয়েছিল, আজ তার কর্মচারীর সংখ্যা ৪ হাজারের কাছাকাছি।
বিশ্বের নানা প্রান্তে দানিয়ুব গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। তাদের অফিস রয়েছে অন্তত ৫০টি শহরে। ২০১৯ সালের হিসাবে এই গোষ্ঠীর বার্ষিক আয় প্রায় ১৩০ কোটি ডলার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফোর্বসের ১০০ ধনী ভারতীয়ের তালিকায় ২০১৫ সালে সপ্তম স্থানে ছিলেন রিজওয়ান। ২০১৮ সালে ওই একই তালিকায় অষ্টম স্থানে তার নাম ছিল। ২০১২ সালে দানিয়ুব ওয়েলফেয়ার সোসাইটি চালু করেন রিজওয়ান। এই সংস্থা তরুণ-তরুণীদের বিনামূল্যে ভাষা শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করে থাকে। সমাজকর্মী হিসাবেও রিজওয়ানের পরিচিতি গড়ে উঠেছে আরব মুলুকে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন