সব বাধা উপেক্ষা করে ট্রেনের ছাদেই যেন বাড়ি যাচ্ছে ওদের ‘স্বপ্ন’

জিবিডেস্ক //

ঈদযাত্রার শেষ দিন আজ। ফলে ভোর থেকেই যাত্রীর চাপ সৃষ্টি হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। যাত্রীর চাপ বাড়লেও টিকিট দেখিয়ে স্টেশনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি তারা তাৎক্ষণিক স্ট্যান্ডিং টিকিট সংগ্রহ করে স্টেশনে প্রবেশ করছেন।

অন্যদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তায় র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপরও তাদের নিষেধ অমান্য করে ট্রেনের ছাদে চড়ে গন্তব্যে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। সব বাধা উপেক্ষা করে ট্রেনের ছাদেই যেন বাড়ি যাচ্ছে ওদের ‘স্বপ্ন’। 

শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

dhakapost

নীল সাগর এক্সপ্রেসের ছাদে ভ্রমণ করা যাত্রী রাসেদুর রহমান বলেন, ভেবেছিলাম ঈদে বাড়ি যাব না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সিদ্ধান্ত নিলাম ঈদ গ্রামেই উদযাপন করব। ঢাকা শহরে পরিবারের সবাইকে ছাড়া ভালো লাগবে না। যেহেতু টিকিট পাইনি তাই ট্রেনের ছাদে করেই যাচ্ছি। কষ্ট হোক তবুও তো বাড়ি যাচ্ছি এটাই আনন্দ। 

একই ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা আরেক মাসুম পাটোয়ারী বলেন, ছাদে গেলে অনেক ঝুঁকি। তবুও যাচ্ছি। কিছুই করার নেই। বাবা-মা বাড়িতে থাকেন। তাদের রেখে ঢাকায় ঈদ উদযাপন করার এ কথা কল্পনাও করতে পারি না। যতই কষ্ট হোক সবাই একত্রিত হব। একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করব। 

মিরাজ নামের আরেক যাত্রী বলেন, মাকে কথা দিয়েছিলাম বাড়ি যাব। না গেলে মা কষ্ট পাবে। আমি একমাত্র ছেলে। আমি না গেলে মা কাকে নিয়ে ঈদ করবে। যতই ঝুঁকি হোক মায়ের মুখ দেখতে হলেও বাড়ি যাবো। মায়ের হাতের রান্না কতদিন খাই না। কতদিন মাকে দেখি না। এবার বাসায় গিয়ে এ আক্ষেপ পূর্ণ হবে। 

dhakapost

ট্রেনের ছাদে যাত্রার বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রেনগুলোতে যাত্রীর চাপ অনেক। চাইলেও অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ব্যাপক ভিড় থাকায় অনেকেই ছাদে চড়ে বাড়িতে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। এরপরেও যাত্রীদের সচেতনতার বিকল্প নেই। সবকিছুর পরেও এবারের ঈদযাত্রা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। 

উল্লেখ্য, এবারের ঈদযাত্রায় উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা সাতটি ট্রেন রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে থামছে না। ট্রেনগুলো সরাসরি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসছে। ঈদযাত্রায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে এমন উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রার শুরুর দিন অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি করছে না। 

এছাড়া ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ও মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ২০ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে। গত ৭ এপ্রিল থেকে এবার ঈদযাত্রায় অনলাইনের মাধ্যমে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওইদিন বিক্রি হয় ১৭ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ৮ এপ্রিল ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল ২০ এপ্রিলের ও ১১ এপ্রিল বিক্রি হয় ২১ এপ্রিলের টিকিট। 

একইভাবে ঈদের ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গত ১৫ এপ্রিল থেকে। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বিক্রি হয়েছে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। গত ১৬ এপ্রিল বিক্রি হয় ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের ও ২০ এপ্রিল বিক্রি করা হয় ৩০ এপ্রিলের টিকিট। প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনে টিকিট ও স্যান্ডিং টিকিট মিলে প্রায় ৬০ হাজারের বেশি যাত্রীরা ঢাকা ছাড়ছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন