জিবিডেস্ক //
কয়েকদিন ধরেই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে পুরনো ডেরা বার্সেলোনায় ফেরানোর জোর প্রক্রিয়া চলছিল। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি বৈঠকে বসে লা লিগা ও বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ। সেখানে মেসিকে ফেরানোর আগে বার্সার দেওয়া একটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে মেসিকে কোন প্রক্রিয়ায় ও কীভাবে কাতালান শিবিরে ফেরানো হবে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে এরমধ্যে মেসিকে ফেরানো নিয়ে আগ্রহী লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস বলছেন ভিন্ন কথা!
প্রায় দুই যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করে ২০২১ সালে বার্সেলোনা থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিয়েছিলেন মেসি। অর্থনৈতিক জটিলতায় ছেড়ে দেওয়া সেই ক্লাবটি এই আর্জেন্টাইন মহাতারকাকে ফেরাতে সাম্প্রতিক সময়ে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাদের আশার বেলুনে নতুন করে হাওয়া লাগে মূলত পিএসজির সঙ্গে মেসির চুক্তি এখনও নবায়ন না হওয়ায়। যদিও সেই সময় মেসি বার্সেলোনার অর্থনৈতিক দুর্গতির কারণেই ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তাকে ফেরানোর প্রসঙ্গ উঠতেই তাই স্বাভাবিকভাবে সেই অর্থনৈতিক হিসেব সামনে আসে। যার ওপর নির্ভর করছে এই মহাতারকা কাতালোনিয়ায় ফেরা।
কিছুদিন আগপর্যন্ত লা লিগা সভাপতি তেবাস উচ্ছ্বসিত ছিলেন মেসির বার্সেলোনায় ফেরার সম্ভাবনায়। কিন্তু তার সেই উচ্ছ্বাস কিছুটা কমে গেছে। যার ফলে মেসির বার্সেলোনায় ফেরাটা মোটেও সহজ কিছু নয় বলে মনে করছেন তিনি। তেবাসের মতে, মেসিকে ফেরাতে বার্সেলোনাকে অনেক কিছুই করতে হবে। লা লিগার বেতনসীমার যে বাধ্যবাধকতা আছে, সেটি পূরণ করতে হবে। উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতির মধ্যে হতে হবে মেসির বেতনকাঠামো।
আরএমসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেবাস মেসির ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী হতে পারেননি, ‘মেসির বার্সেলোনায় ফেরার ব্যাপারে যদি আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেন, তাহলে আমি বলব, ব্যাপারটা বেশ কঠিন। প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল।’
লা লিগা সভাপতি বলছেন, ‘দেখুন, বার্সেলোনা মোটেও পিএসজির মতো কোনো ক্লাব নয়, যেখানে অর্থ কোনো সমস্যা নয়। বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের মোটা অঙ্কের বেতনে খেলানোর সামর্থ্য নেই। তাই বিষয়টি জটিল তাদের জন্য।’
হাভিয়ের তেবাস বলছেন বার্সেলোনাকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এতে বার্সেলোনার বর্তমান স্কোয়াডেও অনেকটা রদবদল আনতে হবে। পিএসজিতে থাকাবস্থায় মেসি যে বেতন পান, তারচেয়ে অনেক কম বেতনে তাকে বার্সায় থাকতে তারা এমনটি আগেই জানিয়েছিল। তবুও তাকে ফেরানোর কার্যক্রম থেমে থাকেনি।
ফলে সাক্ষাৎকারে তেবাস বলছেন, ‘বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বার্সেলোনাকে। মেসিকে জায়গা করে দিতে কিছু খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, সেটি না হলে বেতনসীমা অতিক্রম করে যাবে। খেলোয়াড়দের বেতন কমাতে হবে। এরপর মেসির বেতন নিয়ে ভাবতে হবে। মেসিকে তো আর যেকোনো অঙ্কের বেতন দেওয়া যাবে না। তার চাহিদা অনুযায়ীই দিতে হবে। মেসির চাহিদা নিশ্চয়ই বেশি হবে।’
এদিকে, মেসির সঙ্গে ফরাসি ক্লাব পিএসজির করা দুই বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আসন্ন জুনে। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন মেসি। কিন্তু পিএসজির হয়ে তিনি এখন পর্যন্ত সফল নন। টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে ফরাসি জায়ান্টরা। এ দুই বছর জিততে পারেনি ফ্রেঞ্চ কাপও। মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ জেতার পর পিএসজির নতুন চুক্তির সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম বলছে সেটি নানা কারণে আটকে আছে। মেসি পিএসজিকে নতুন চুক্তির জন্য যে শর্ত দিয়েছেন, সেটি নাকি মানা সম্ভব নয় ফরাসি ক্লাবটির। এমন অবস্থায় মেসির পিএসজি অধ্যায় শেষ হওয়ার উপক্রম।
যা বার্সাকে নতুন করে ভাবাতে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া বার্সার সাবেক তারকা ফুটবলারদের ক্রমাগত পরামর্শ এবং ক্যাম্প ন্যুতে ‘মেসি মেসি’ ধ্বনি তাকে ফেরানোর বিষয়টিকে আরও গাঢ় করে তোলে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে সমর্থক ও কর্তৃপক্ষের সেই চাওয়া পূূরণ করা জটিলই মনে হচ্ছে। মেসিকে ভেড়াতে বার্সা ছাড়াও আমেরিকান মেজর সকার ক্লাব ইন্টার মিয়ামি ও সৌদি ক্লাব আল-হিলালও টাকার বস্তা নিয়ে বসে আছে। ইতোমধ্যে তারা নানা অফারে এই মহাতারকাকে রাজি করানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ও মিয়ামির মালিক ডেভিড বেকহ্যাম গতকাল হঠাৎই হাজির হয়ে যান পিএসজির ট্রেনিংয়ে। যেটি মেসির দলবদলকে কেন্দ্র করে নয়, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবমিলিয়ে শেষ পর্যন্ত মেসির পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হতে যাচ্ছে, সেটি জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হচ্ছে!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন