জিবিডেস্ক //
চীনের বেড়ে চলা প্রভাব-প্রতিপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সে দেশের প্রতি অভিন্ন নীতির রূপরেখা স্থির করতে চায়। ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শুক্রবার সেই লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন ও তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক যে আগের মতো স্বাভাবিক ছন্দে চলতে পারে না, সে বিষয়ে ইউরোপে তেমন দ্বিমত নেই। তবে অন্যান্য সংকটের মতো এ ক্ষেত্রেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
সেই দুর্বলতা দূর করতে এবার পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে চীনের প্রতি অভিন্ন নীতি গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে ইইউ। চীনের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে আরও কড়া অবস্থান নিতে সে দেশকে উদ্বুদ্ধ করাই সেই উদ্যোগের মূলমন্ত্র।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালেও এক যৌথ ঘোষণাপত্রে চীনকে একইসঙ্গে সহযোগী, প্রতিযোগী ও ‘সিস্টেম্যাটিক’ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বর্ণনা করেছিল ইইউ। তারপর থেকে প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের অবস্থান আরও কড়া হয়েছে বলে ইউরোপ মনে করছে।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে শুক্রবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীনের প্রতি অভিন্ন নীতির রূপরেখা স্থির করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস স্বীকার করেন, চীনের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা বেড়ে চলায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে তিনি সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বদলে ‘স্মার্ট ডি-রিস্কিং’ নীতির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ক্ষেত্রে ইউরোপের নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানান।
ইইউ অবশ্য চীনের সঙ্গে সংঘাতের পথে এগোতে ভয় পাচ্ছে না। সম্প্রতি চীনের আটটি কোম্পানিকে উন্নত প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে ব্রাসেলস। ঘুরপথে সেই প্রযুক্তি মস্কোর হাতে চলে যেতে পারে বলে ইইউ সন্দেহ করছে। এমন পদক্ষেপের ফলে চীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
ইউরোপ সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিন গাং বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ‘প্রয়োজনীয় জবাব’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক তাকে সরাসরি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রশ্নে চীনের ঘোষিত নিরপেক্ষতা কার্যত আগ্রাসী পক্ষের প্রতি সমর্থনের সমান।
জার্মানিসহ ইউরোপের কিছু দেশ চীনের প্রতি আরও কড়া মনোভাব দেখালেও ইইউয়ের অন্য সদস্যরা বেইজিংকে চটাতে দ্বিধা দেখাচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত মাসে বেইজিং সফরের পর বলেন, তাইওয়ানের প্রশ্নে ইইউয়ের পুরোপুরি মার্কিন নীতি অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।
সেই মন্তব্যের ফলে ইউরোপে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাটেরিন কোলোনা ‘বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ বজায় রাখতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
এমন ভিন্ন মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রতি ইইউয়ের অভিন্ন নীতি যে সহজ হবে না, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। শুক্রবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকেও কোনও স্পষ্ট ফলের প্রত্যাশা রাখা হচ্ছে না।
ইইউয়ের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেপ বরেল বৃহস্পতিবার বলেন, পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ নয়। চীন কীভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সেইসঙ্গে চীনের প্রশ্নে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সমন্বয় করতে চায় ইইউ।
আর তাই শনিবার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও ইইউ সতীর্থরা চীনের বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন