ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিবিসিসিআই) ডাইরেক্টর জেনারেল (ডিজি) পদ থেকে এএইচএম নুরুজ্জামানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। ১৬ মে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সঙ্গে এএইচএম নুরুজ্জমানের বিরুদ্ধে উঠা মোট ৪টি অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে বিবিসিসিআই।
বোর্ড সভায় তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়ান মাহাদিকে নতুন ডাইরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ডাইরেক্টর দেওয়ান মাহাদি এর আগে ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বোর্ডের এসব সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
জানা গেছে, ডাইরেক্টর মুসলেহ আহমদ গত বছরের ২০ নভেম্বর বিবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্টকে লেখা এক ই-মেইলে অভিযোগ করেন, বিবিসিসিআই- এর অফিসিয়াল ইমেইল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ডাইরেক্টরদের ব্যক্তিগত ই-মেইল ঠিকানাও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সংগঠনের অফিসিয়াল ইমেইল ব্যবহার করে এমন কাজ কীভাবে ঘটলো এবং এর পেছনে কে জড়িত সেটি তদন্তের অনুরোধ জানান। প্রাথমিকভাবে ডাইরেক্টর জেনারেল যেহেতু বিবিসিসিআই-এর কাজের জন্য দায়িত্বশীল, তাই ওই ঘটনায় ডিজি’র ভূমিকা তদন্তের অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে ডিজি নুরুজ্জামান ডাইরেক্টর ফি যথাযথভাবে পরিশোধ করেছেন কি-না তার প্রমাণ বার্ডে উপস্থাপন করতে বলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বোর্ডে কোনো আলোচনা ছাড়াই ডিজি নুরুজ্জমান একজন ডাইরেক্টর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, আবেদনকারীর ফি ৫ হাজার পাউন্ড, যা অফেরতযোগ্য। ডাইরেক্টরশিপের আবেদন ফি ‘অফেরতযোগ্য’ কথাটি বিবিসিসিআই-এর সংবিধানের লঙ্ঘন। কি উদ্দেশ্যে নুরুজ্জামান ডাইরেক্টর ফি ‘অফেরতযোগ্য’ উল্লেখ করলেন এবং বোর্ডের অনুমিত ছাড়া সার্কুলার প্রকাশ করে সংবিধান বহির্ভূত কাজ করলেন- তা তদন্তের অনুরোধ জানান। এছাড়া, যে কোম্পানির ডাইরেক্টর দাবি করে নুরুজ্জামান বিবিসিসিআই-এ সদস্যপদ নিয়েছেন সেই ‘তাজ একাউনটেন্টস লিঃ’ একটি ডরমেন্ট (অকার্যকর) কোম্পানি উল্লেখ করে তাঁর সদস্যপদের বৈধতা যাচাইয়েরও আবেদন জানান মুসলেহ আহমদ।
বিবিসিসিআই-এর কয়েকজন ডাইরেক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৬ মে বিবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে একটি এজেন্ডা ছিলো ‘ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’। সভায় মোট ৩২ জন ডাইরেক্টরের মধ্যে ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রেনু। সভায় অন্যান্য এজেন্ডার আলোচনা ঠিকঠাক শেষ হয়। কিন্তু ১২ নম্বর এজেন্ডায় থাকা ‘ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ সম্পর্কে আলোচনা উঠতেই সভা শেষ করার অনুরোধ জানান কয়েকজন। বোর্ড আলোচনা চালিয়ে যেতে চাইলে হইচই করে সভাস্থল ত্যাগ করেন এএইচএম নুরুজ্জামান, শাহগির বখত ফারুক, বশির আহমদ ও ওয়ালি তসর উদ্দিন।
উপস্থিত বাকী সদস্যরা আলোচনা চালিয়ে যান। তাঁরা একমত হন যে, অন্য ডাইরেক্টররা সভা ত্যাগ করতে পারলেও ডিজি’র দায়িত্বে থেকে বোর্ডের বা প্রেসিডেন্টের অনুমতি ছাড়া নুরুজ্জামান বোর্ড সভা ত্যাগ করতে পারেন না। এরা তাঁর দায়িত্বের ‘চরম লঙ্ঘণ’ (গ্রস মিসকন্ডাক্ট)। যে কারণে বোর্ডে ভোটাভুটির মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে নুরুজ্জামানকে তাৎক্ষণিকভাবে ডিজি’র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। চারজন ডাইরেক্টর ভোট প্রদানে বিরত ছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলোর তদন্তে ডাইরেক্টর মহিব চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে আগামী বোর্ড সভায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আগামী বোর্ড সভায় নুরুজ্জমানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিবিসিসিআই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন