জিবিডেস্ক //
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক দলকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, সামরিক আদালতে বিচারের পর তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করার বিষয়েও তার কোনও সন্দেহ নেই।
এর আগেও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনায় দেশটির সেনাবাহিনীর দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন ইমরান খান। তবে শনিবার রাতে লাহোরে নিজ বাড়িতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন তিনি।
এই ধরপাকড়ের পেছনে কারা রয়েছে, জানতে চাইলে সাবেক এই ক্রিকেট তারকা রয়টার্সকে বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে প্রভাবশালীদের কাজ। আর এই প্রভাবশালী বলতে অবশ্যই সামরিক প্রভাবশালীদের বোঝাচ্ছি। কারণ তারা এখন আসলেই প্রকাশ্যে... মানে আমি বোঝাতে চাইছি তারা এখন খোলামেলাভাবেই এটা করছে।
পাকিস্তানের ৭৫ বছরের শাসনের ইতিহাসে সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। এই বাহিনী খুব কমই তাদের ক্ষমতার জন্য জনসাধারণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, যেমনটা হয়েছে ইমরানের খানের দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে। তবে দেশটির সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ইমরান খানের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।
জরিপ অনুযায়ী, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান। এক বছরের বেশি সময় ধরে তার সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর অচলাবস্থা চলছে। গত মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর উত্তাল হয়ে ওঠে পাকিস্তান। ওই সময় পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা দেশটির সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা ও কর্মকর্তার বাসভবনে হামলা, লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের সামরিক আদালতে বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
রাজনৈতিক এই অস্থিতিশীলতা ২২ কোটি মানুষের পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটিতে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। করোনাভাইরাস মহামারি আর ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রভাবে দেশটির অর্থনৈতিক সংকটও অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গত মাসে ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশজুড়ে যে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটিকে মিথ্যা অজুহাত বানিয়ে তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় ১৫০টি ফৌজদারি মামলা অযৌক্তিক এবং যেকোনও বেসামরিক আদালতে এসব মামলা বাতিল হয়ে যাবে।
কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভে জড়িত সন্দেহে পিটিআইয়ের সদস্যসহ কয়েক ডজনের বিচার সামরিক আদালতে করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সাধারণত সেনাসদস্য এবং রাষ্ট্রের শত্রু হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিচার সামরিক আদালতে করা হয়।
ইমরান খান বলেন, তারা একমাত্র এই পথেই আমাকে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তার ক্ষমতায় ফেরা থামাতে চায়।
‘তাই তাদের একমাত্র আশা এবং যেহেতু তারা আমাকে পথ থেকে সরিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আমি মনে করি তারা সেটি করবে, তাদের সামরিক আদালত আমাকে কারাবন্দি করেই থামবে।’ বর্তমানে জামিনে রয়েছেন সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘কেবল আমার জন্যই যে সামরিক আদালত, সেবিষয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই।’
দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ের ঘটনার সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, অতীতে পাকিস্তানের সামরিক আদালত যথাযথ প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা ছাড়া জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় এবং অন্যায্য বিচারের পর বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন