জিবিডেস্ক //
চীন কিছুদিন ধরে কিউবা থেকে গুপ্তচরবৃত্তি করছে বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। একইসঙ্গে ২০১৯ সালে বেইজিং দেশটিতে তার গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের অবকাঠামো আরও আপগ্রেড করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কিউবায় গুপ্তচর ঘাঁটি তৈরি করতে দেশটির সাথে এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি একটি গোপন চুক্তিতেও পৌঁছেছে বলে রিপোর্টে সামনে আসার পর মার্কিন ওই কর্মকর্তার বক্তব্য সামনে এলো। রোববার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন কিছুদিন থেকে কিউবা থেকে গুপ্তচরবৃত্তি করছে এবং ২০১৯ সালে সেখানে নিজেদের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের অবকাঠামো বেইজিং আরও আপগ্রেড করেছে বলে শনিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত দ্বীপে ইলেকট্রনিক ইভসড্রপিং অবকাঠামো স্থাপনের জন্য কিউবার সাথে গোপন চুক্তিতে পৌঁছেছে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কিউবান সরকার ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে দৃঢ় সন্দেহ প্রকাশ করেছে আগেই।
রয়টার্স বলছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মিডিয়ার বৈশিষ্ট্য ‘আমাদের বোঝাপড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটি কীভাবে ভুল ছিল তা তিনি খোলসা করেননি বা কিউবায় নতুন করে গোপনে গুপ্তচর ঘাঁটি তৈরি করার প্রচেষ্টা চীন চালাচ্ছে কিনা তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেননি তিনি।
তিনি বলেছেন, এই সমস্যাটি জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই ছিল। মূলত বেইজিংয়ের বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য অবকাঠামো শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এমন চেষ্টা চলছে।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি চলমান সমস্যা এবং নতুন কোনও ঘটনা নয়। পিআরসি (পিপলস রিপাবলিক অব চায়না) ২০১৯ সালে কিউবায় তার গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের অবকাঠামোগুলোর একটি আপগ্রেড করেছে। এই বিষয়টি গোয়েন্দা রেকর্ডে বেশ ভালোভাবেই নথিভুক্ত আছে।’
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের শুক্রবারের বিবৃতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। চীনা ওই মুখপাত্র কিউবার গুপ্তচর স্টেশনের কথা বলে ‘গুজব ও অপবাদ ছড়ানোর’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন।
কিউবান সরকার অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে কিউবার সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস ফার্নান্দেজ ডি কসিও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই রিপোর্টটিকে গত বৃহস্পতিবার ‘সম্পূর্ণভাবে জঘন্য এবং ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন।
একইসঙ্গে এটিকে তিনি কিউবার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের কয়েক দশকের পুরোনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য মার্কিন বানোয়াট প্রতিবেদন বলেও অভিহিত করেন। সেদিন তিনি বলেন, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে সব ধরনের বিদেশি সামরিক উপস্থিতিকে প্রত্যাখ্যান করে কিউবা।
মূলত গোপন গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এই প্রতিবেদন সামনে এনেছিল। কিউবার সাথে চীনের গোপন চুক্তির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য জানেন এমন মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, এই ধরনের গুপ্তচর স্থাপনা তৈরি করা গেলে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহ করার সক্ষমতা চীনের হাতে চলে যাবে।
আর যুক্তরাষ্ট্রের ওই এলাকায় বহু মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। একইসঙ্গে কিউবার আশপাশের এলাকায় জাহাজের চলাচলও পর্যবেক্ষণ করতে পারবে বেইজিং। মূলত মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের সদর দপ্তর টাম্পায় অবস্থিত। এছাড়া অতীতে ফোর্ট ব্র্যাগ নামে পরিচিত বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ফোর্ট লিবার্টিও উত্তর ক্যারোলিনায় অবস্থিত।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুপ্তচর ঘাঁটি তৈরি করতে চীন ও কিউবা নীতিগতভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে মার্কিন ওই কর্মকর্তারা বলেছেন। আর ইলেকট্রনিক ইভসড্রপিং তৈরির অনুমতি পেতে কিউবাকে ‘কয়েক বিলিয়ন ডলার’ দিতে হবে চীনকে।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় চীনা গুপ্তচর বেলুন ভূপাতিত করা নিয়ে বৈশ্বিক এই দুই পরাশক্তি দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই উত্তেজনা এখনও বিদ্যমান রয়েছে এবং তা প্রশমিত করার জন্য ওয়াশিংটন ও বেইজিং অস্থায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে রিপোর্ট আসার মধ্যেই এই চুক্তির খবরটি সামনে এলো।
রয়টার্স বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আগামী ১৮ জুন চীন সফর করার পরিকল্পনা করছেন। যদিও গুপ্তচর বেলুনের সেই ঘটনায় ওয়াশিংটনের শীর্ষ এই কূটনীতিক এর আগে দেশটিতে সফর বাতিল করেছিলেন।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক প্রশাসন কিউবায় চীনা অবস্থানের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) সে বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি এবং আরও সরাসরি এগোনোর প্রয়োজন ছিল’।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, চীনকে ঘাঁটি করতে দেওয়ার বিষয়ে যেসব দেশ বিবেচনা করছে, সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকরা যোগাযোগ করেছে এবং তাদের সাথে তথ্য বিনিময়ও করেছে।
তার ভাষায়, ‘আমাদের বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন হচ্ছে- আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চীনকে (তাদের লক্ষ্য অর্জনে) ধীর করেছে। আমরা মনে করি, চীন যেখানে নিজেদেরকে দেখবে বলে আশা করেছিল, দেশটি ঠিক সেখানে নেই।’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক তৎপরতা থেকে শুরু করে তাইওয়ানের কাছাকাছি নানাবিধ তৎপরতা, বেইজিংয়ের মানবাধিকার রেকর্ড এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র কিরবি বলেছিলেন, ‘কিউবার সাথে চীনের সম্পর্ক নিয়ে আমাদের প্রকৃত উদ্বেগ রয়েছে এবং আমরা প্রথম দিন থেকেই আমাদের গোলার্ধে এবং বিশ্বজুড়ে চীনের কার্যকলাপ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন রয়েছি।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন