রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনসহ যোদ্ধারা ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র বিদ্রোহে নেমেছিল তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বা সামরিক জোট ন্যাটোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এছাড়া রাশিয়ায় বিদ্রোহ এবং এ সংক্রান্ত নানা ঘটনার জেরে প্রধান প্রধান মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সশস্ত্র বিদ্রোহে ওয়াশিংটন এবং ন্যাটোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
সোমবার এক বক্তৃতায় ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ‘প্রধান মিত্রদের’ সাথে কথা বলেছেন। তারা সম্মত হয়েছে, এই ঘটনায় অজুহাত হিসেবে ‘পশ্চিমের ওপর দোষারোপ করা’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বাইডেন বলেন, ‘আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমরা এতে জড়িত নই, এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। এটি রাশিয়ান সিস্টেমের মধ্যে ত্রুটির একটি অংশ।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সপ্তাহান্তের এই ঘটনার ফলাফল এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য সেটির প্রভাব আমরা মূল্যায়ন করব। কিন্তু এই ঘটনার ফলাফল ও প্রভাব সম্পর্কে এখনই নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না।’
গত শুক্রবার রাতে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার রোস্তোভ প্রদেশে প্রবেশ করেন ওয়াগনার সেনারা। পুরো বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন প্রিগোজিন নিজে। প্রথমে তারা রোস্তোভের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখল করেন। এরপর মস্কোর দিকে অগ্রযাত্রা শুরু করেন।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনী যে কথিত বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছেন সেটি রোস্তোভের এই সদর দপ্তর থেকেই পরিচালনা করা হতো।
ওয়াগনার বাহিনীর বহরটি প্রথমে রোস্তোভে যায় এবং রোস্তভ-অন-ডন শহর দখল করে। পরে সেখান থেকে ভোরোনেজে গিয়ে মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। আর ঠিক তখনই হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোঁড়া হয়। ওই বহরটিতে সাঁজোয়া যান এবং অন্তত একটি ট্যাংক ছিল।
এদিকে ওয়াগনার সেনারা যেন কোনোভাবেই মস্কোতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সেখানে আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। মস্কোর বিখ্যাত রেড স্কয়ারে লোহার ব্যারিকেডও দেওয়া হয়। প্রিগোজিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুকে অপসারণের দাবি জানান।
পরে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের ওই লড়াই অনেকটা নাটকীয় ভাবেই থেমে যায়। মূলত ক্রেমলিনের সামরিক নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়ে রাজধানী মস্কো অভিমুখে যাত্রা করার ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় এক চুক্তিতে বিদ্রোহের অবসান হয়। যদিও সেই চুক্তির বিশদ বিবরণ এখনও প্রকাশিত হয়নি। এর আগে অবশ্য প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনকে ‘দেশদ্রোহিতা’ এবং ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ করার জন্য অভিযুক্ত করেন।
সোমবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার উল্লেখ করেন, ‘রাশিয়ায় বিদ্রোহের পর গতিশীল পরিস্থিতি রয়ে গেছে’ এবং এই ঘটনায় মার্কিন স্বার্থের ‘চূড়ান্ত প্রভাব’ ঠিক কী হবে তা স্পষ্ট নয়।
তিনি আরও বলেছেন: ‘তবুও প্রেসিডেন্ট পুতিনের নেতৃত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা অবশ্যই একটি নতুন বিষয়।’
এছাড়া সোমবার বাইডেন সাংবাদিকদের আরও বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ‘দীর্ঘসময় কথা বলেছেন’ এবং রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন