লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফার ময়দান

 ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে আরাফাতের ময়দান। এরই মধ্যে আরাফাতে মসজিদে নামিরা থেকে ইসলামের মর্মবাণী তুলে ধরে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের খুতবা।

হজের প্রথম ফরজ হলো ইহরাম বাঁধা। আর দ্বিতীয় ফরজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান। ইহরাম বাঁধার পর হজের এই অবশ্যপালনীয় কাজ সম্পাদনে এরইমধ্যে পাহাড়ঘেরা আরাফাত ময়দানে অবস্থান করছেন লাখ লাখ হজযাত্রী।
 মঙ্গলবার (২৭ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৩টায়) মসজিদে নামিরা থেকে হজযাত্রীদের উদ্দেশে খুতবা শুরু হয়। খুতবা দিচ্ছেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।
 হজের খুতবা দেয়া হচ্ছে আরবিতে। তবে অনুবাদ করে তা আরও ২০ টি ভাষায় সম্প্রচার করা হচ্ছে। ভাষাগুলো হলো: বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি, ফার্সি, উর্দু, হাউসা, রাশিয়ান, তুর্কি, চীনা, মালয়, সোয়াহিলি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, আমহারিক, জার্মান, সুইডিশ, ইতালীয়, মালয়ালম, বসনিয়ান ও ফিলিপিনো।
 এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলা ভাষায় হজের খুতবা শোনা যাচ্ছে। এবার খুতবার বাংলা অনুবাদ করছেন ড. খলীলুর রহমান ও আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান। তাদের সঙ্গে আরও রয়েছেন মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। তারা সবাই সৌদির বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
মানারাতুল হারামাইন অ্যাপ, আল কোরআন চ্যানেল ও আস সুন্নাহ চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটারেও খুতবা শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া ওয়েবসাইট থেকে বিগত বছরের খুতবা শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগের তত্ত্বাবধানে অনুবাদের পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ বছর বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষ লাইভ সম্প্রচারিত খুতবা শুনবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
 করোনা মহামারি-পরবর্তী এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার বিধিনিষেধ পুরোপুরি উঠে যাওয়ায় এবার আগের বছরের তুলনায় বহু সংখ্যায় বেড়েছে হজযাত্রী।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার মুসলমান। আর ২০২১ সালে ৫৯ হাজার। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ লাখই ছিল বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসা।
 
গত রোববার (২৫ জুন) মক্কায় কাবাঘর প্রদক্ষিণ করেন হজযাত্রীরা। এরপর ৮ জিলহজ তথা গত সোমবার (২৬ জুন) সকাল থেকে শুরু হয় হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন কেউ হেঁটে আবার কেউ বাসে করে মিনায় জড়ো হন। মিনা পরিণত হয় তাঁবুর শহরে।
 
মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে মিনার দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটারের মতো। এখানে খোলা আকাশের নিচে ২৫ লাখ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লক্ষাধিক তাঁবু টানানো হয়।
 
সোমবার (২৬ জুন) সারা দিন ও দিবাগত সারা রাত মিনায় অবস্থান করেন হজযাত্রীরা। এ সময় সেখানে মহান আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন।
 
এরপর ৯ জিলহজ তথা মঙ্গলবার (২৭ জুন) ফজরের দুই রাকাত নামাজ আদায়ের পর তারা মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে জড়ো হতে থাকেন।
 

 
আরাফাত ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল কাজ। চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাতের সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে এক মাইল বিস্তৃত।
 
মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করেন। এর মধ্যেই হজের খুতবা শুরু হয়। হজযাত্রীরা সেই খুতবা শুনছেন এবং এরপর একসাথে জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন।
 
এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তা’য়ালার জিকির-আসকার ইবাদতে দোয়ায় মশগুল থাকবেন। এরপর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাত ময়দান ত্যাগ করবেন।
 
মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারা রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি পাথর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন।
 
মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে আবারও মিনার দিকে রওনা হবেন। ১০ জিলহজ তথা বুধবার (২৮ জুন) মিনায় পৌঁছার পর হজযাত্রীদের পর্যায়ক্রমে কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
 

 
প্রথমত, মিনাকে ডান দিকে রেখে দাঁড়িয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয়ত, মাথা ন্যাড়া করা।
 
হজের তৃতীয় ও শেষ ফরজ তাওয়াফে জিয়ারাহ করা তথা কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। এরই মধ্যদিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাজিরা মেতে উঠবেন ঈদের আনন্দে।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন