বিক্ষোভ থামাতে অভিভাবকদের যে আহ্বান জানালেন ম্যাক্রোঁ

পুলিশের গুলিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণের মৃত্যুর জেরে ফ্রান্সে চলমান বিক্ষোভ থামাতে অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া এবং সন্তানদের ঘরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

শুক্রবার প্যারিসে মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে ৪৫ বছর বয়স্ক ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যারা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে, তাদের অধিকাংশ একেবারেই তরুণ। অনেকেই এখনও প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি।’

‘অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে— সেসবের খোঁজ রাখা অভিভাবকদের দায়িত্ব, রাষ্ট্রের নয়। আমি ফ্রান্সের অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার জন্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়াতে থাকা বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ও সংবাদকেও দায়ী করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ নিয়ে স্ন্যাপচ্যাট, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর ভুয়া তথ্য ও সংবাদ ছাড়ানো হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।

ফ্রান্সে গত তিন দিন ধরে তীব্র বিক্ষোভ চলছে। ইতোমধ্যে গত তিন দিনে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার বিক্ষোভকারীকে, যাদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতে আহত হয়েছেন অন্তত ২৫০ জন পুলিশ সদস্য।

গত মঙ্গলবার সূত্রপাত হয় এই বিক্ষোভের। ওইদিন সকালে প্যারিসের উপশহর নানতেরে ট্রাফিক বিধি অমান্য করে জোরে গাড়ি চালানোর অভিযোগে নাহেল এম. নামের ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ গাড়ি থামানোর নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু নাহেল তাতে কর্ণপাত না করে গাড়ি নিয়ে সরে পড়ার চেষ্টা করলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন পুলিশ সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাহেলের।

নাহেলের পরিবারের সদস্যরা আলজেরিয়া থেকে এসে ফ্রান্সে স্থায়ী হয়েছেন। তাদের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো নয়। প্যারিসের নানতের উপশহরটি মূলত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকা। সেখানেই মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। নাহেল ও তার মা মৌনিয়া ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

পুলিশের গুলিতে নাহেল নিহত হওয়ার পরই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে নানতেরে। তারপর বৃহস্পতিবার বিকেলে এক অনলাইন বার্তায় নাহেলের মা মৌনিয়া তার নিহত ছেলের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে পাশে থাকার জন্য বিক্ষোভকারীদের ধন্যবাদও জানান তিনি।

তার এই অনলাইন বার্তা পোস্ট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে আন্দোলন তীব্র রূপ নিতে থাকে। প্যারিসসহ ফ্রান্সের শহর শহরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিক্ষোভ।

মূল বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল প্যারিসে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ না নিয়ে সামনের দিনগুলোতে ফ্রান্সের শহরাঞ্চলে বিক্ষোভকারীদের ধ্বংসযজ্ঞ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

নাহেলকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো সেই পুলিশ সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। নাহেলের মা মৌনিয়া বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমার অভিযোগ কেবলমাত্র আমার ছেলেকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া পুলিশসদস্যদের প্রতি। ফ্রান্সের পুলিশের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।’

কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শুক্রবার ব্রাসেলসে জরুরি সফর বাতিল করে মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। বৈঠক শেষে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, সেক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বৈঠকে।’

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন