ভক্তদের উন্মাদনা না দেখেই চলে গেলেন মার্টিনেজ

ফুটবল মানচিত্রে বাংলাদেশ তেমন পরিচিত কেউ না হলেও দেশটিতে ফুটবলে জনপ্রিয়তার কমতি নেই। বিশ্বকাপ এলেই ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা চরমে পৌঁছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা অজানা ছিল না বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের। কলকাতা সফরের সব ঠিকঠাক হয়েই ছিল মেসির এই জাতীয় দল সতীর্থের। কিন্তু বাংলাদেশি ভক্তদের টানে এ দেশেও আসার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন।

মূলত ৪-৫ জুলাই কলকাতায় থাকার কথা ছিল মার্টিনেজের। তাকে কলকাতায় নিয়ে আসছেন ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত। মার্টিনেজের আগ্রহের প্রেক্ষিতে তিনি কলকাতার আগে বাংলাদেশে ঘুরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল পুরো দিনই বাংলাদেশে রাখার। অনেক প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করতে এগিয়ে আসার আগ্রহী হলেও ডলার সংকট জটিলতায় সেটি সম্ভব হয়নি। এরপরও শেষ পর্যন্ত মার্টিনেজ এসেছেন ১১ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত সফরে। তবে তার এমন সফর সমর্থকদের যন্ত্রণা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 

‘নট অ্যালাউ’ সাধারণ মানুষ ও মিডিয়া

কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর শিরোপা জেতানোয় লিওনেল মেসি যদি হন নায়ক, তবে এমি মার্টিনেজ ছিলেন অন্যতম নায়ক। কোয়ার্টার ফাইনাল ও ফাইনালে টাইব্রেকারে গুরুত্বপূর্ণ শট তো ঠেকিয়েছেনই, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেও গোল ঠেকিয়ে দলের ত্রাতা বনে গেছেন। লুসাইল স্টেডিয়ামের সেই ফাইনালের অন্তিম মুহূর্তে ফ্রান্সের কোলো মুয়ানির শট অবিশ্বাস্যভাবে না ঠেকালে সেখানেই হয়ত শেষ হয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনার তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। সেই মার্টিনেজ প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসলেন। কিন্তু তাকে একনজর দেখার সুযোগ পেলেন না সাধারণ মানুষ। 

মার্টিনেজের এ সফর নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ ক্রীড়াঙ্গনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মার্টিনেজকে বাংলাদেশে এনেছে ফান্ডেড নেক্সটের প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেঞ্চার। তারা অর্থ ব্যয় করে আনলেও জনসাধারণ এমনকি মিডিয়ার জন্য কোনো সেশনই ছিল না। এ নিয়ে গতকাল ফান্ডেড নেক্সটের কর্মকর্তারা নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আজ সকালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় মার্টিনেজ পরিদর্শনের সময় আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ পলক এসেছিলেন। ভক্তদের সম্পৃক্ত না করা নিয়ে তাকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। এর উত্তরে তিনি বলেন,' ফান্ডেড নেক্সট এর ব্যক্তিগত উদ্যোগে মার্টিনেজ এসেছে। সময় স্বল্পতায় তারা পাবলিক অনুষ্ঠান করতে পারেননি।

dhakapost

মার্টিনেজকে একনজর দেখতে ভক্ত ও গণমাধ্যমকর্মীদের অপেক্ষা।

অবশ্য নিজে কিভাবে আমন্ত্রণ পেলেন সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পলক,‌ ‘জায়েদ এবং গালিব (ফান্ডেড নেক্সট) আমার কাছের ছোট ভাই তারা আইটি সেক্টর নিয়ে কাজ করে। ২৬ জুন এটি কনফার্ম হওয়ার পর তারা আমাকে জানায়। আমিও ৬ বছর বয়স থেকে আর্জেন্টিনার সমর্থক। তাই স্বপরিবারে এসেছি।’ 

পলক গণমাধ্যমে তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেছিলেন মার্টিনেজের এই সফর ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা দেবে। এত বড় ফুটবলার বাংলাদেশে আসলেন সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পাননি কোনো ফুটবলার। অথচ ডাকা হয়েছে একজন সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জাকে। এ নিয়ে গণমাধ্যমকে উত্তর দিতে হয়েছে পলককে,‌' আমন্ত্রণের বিষয়টির ব্যাপারে আমি পুরোপুরি উত্তর দেওয়ার অবস্থানে নেই। মাশরাফি নিজেও আর্জেন্টিনার সমর্থক। এখানে আসলে জায়েদ ও গালিবের ঘনিষ্ঠজনরাই আমন্ত্রিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো ক্রাইটেরিয়া ছিল না।'

আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের ভালোবাসা প্রকাশ হয়েছে মিডিয়ার মাধ্যমে। মার্টিনেজের সফরে সেই মিডিয়া একেবারেই উপেক্ষিত ছিল। প্রশ্ন করার সুযোগ তো ছিলই না এমনকি চিত্রগ্রহণও ভালোভাবে করা যায়নি। মূল ধারার গণমাধ্যম উপেক্ষিত থাকলেও ইউটিবারদের মার্টিনেজের সাক্ষাৎ করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য,' এখানে যারা এসেছে সবাই জায়েদ ও গালিবের সম্পর্কের মাধ্যমেই। অনেকটা পারিবারিক ও তাদের পরিচিত পরিবেশে অনুষ্ঠানটি হয়েছে। যারা সুযোগ পেয়েছেন, তারাও আমন্ত্রিত ছিলেন।' এ নিয়ে গণমাধ্যমকে দুঃখিত না হওয়ারও অনুরোধ জানান পলক। 

dhakapost

অল্পকিছু সৌভাগ্যবান মার্টিনেজের সাক্ষাৎ পেয়েছেন।

হতাশ দেশের ফুটবল সংশ্লিষ্টরা

অনেক দিন পর এক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারকা এসেছিলেন ঢাকায়। ১১ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত এই সফরে তার সান্নিধ্য পাননি কোনো ফুটবলার ও ফুটবলসংশ্লিষ্ট কেউ। এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে চরম হতাশা রয়েছে। 

দিন তিনেক আগেই বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। আজ দুপুরে দেশে নেমেই জানলেন আর্জেন্টিনার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গোলরক্ষক এমিলিয়েনো মার্টিনেজ বাংলাদেশ ছাড়ছেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। সাফের ফাইনালে না যাওয়ার বেদনার সঙ্গে মার্টিনেজকে না পাওয়ার বেদনাও যোগ হলো জিকোর কন্ঠে,‌ ' দেখা হলে কিছু টিপস নিতাম। বাংলাদেশে আসল দেখা হলো না। আর কখনো দেখা হবে কিনা তাও জানি না। ফেডারেশনের মাধ্যমে আসলে বা ফেডারেশনে যোগাযোগ করলে হয়তো আমরা ফুটবলাররা সুযোগ পেতাম সাক্ষাতের। '

অনেক তারকা সাবেক ফুটবলার আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েও মার্টিনেজকে দেখার আমন্ত্রণ পাননি। অন্য দিকে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সপরিবারে মার্টিনেজের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। এ নিয়ে নানা মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ফুটবলসংশ্লিষ্ট ছাড়াও অন্য ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদ,সংগঠক সবাই ফুটবলের কাউকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

অপেক্ষায় থেকেও দেখা পাননি জামাল ভূঁইয়া

ঢাকা সফরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মার্টিনেজ বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। বাংলাদেশ ফুটবল দল বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বের হওয়ার পথে ছিল তখন। কিছু সময় মার্টিনেজের জন্য অপেক্ষা করেও সাক্ষাৎ পাননি বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশের অনেক ফুটবলার নিজ গন্তব্যে রওনা দিয়েছিলেন। জামাল ভূঁইয়া টিম অ্যাটেনডেন্ট মো. মহসীনকে নিয়ে মার্টিনেজকে দেখতে বর্হিগমনের দিকে যান। মার্টিনেজকে স্বল্প দূরত্ব থেকে দেখলেও বাংলাদেশের অধিনায়ক ফ্রেমবন্দি হওয়া কিংবা পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাননি।

জাতীয় দলের টিম অ্যাটেনডেন্ট মো. মহসিন ঘটনা বর্ণনা করলেন এভাবে, ‘অনেকে চলে গেলেও জামাল ভাইয়ের মার্টিনেজের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল। তিনি আমাকেও সঙ্গে নেন। আমরা অপেক্ষা করছিলাম এবং কয়েকজনকে বলেছি, বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক অপেক্ষা করছেন। মার্টিনেজ গাড়ি থেকে নামার পরপরই তাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।' 

dhakapost

সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা বাংলাদেশে আসেন কদাচিৎ। আর তাই তাদের নিয়ে মাতামাতির কমতি থাকে না। এর আগে মেসি কিংবা জিদানের বাংলাদেশ সফরকালেও বিপুল উৎসাহ দেখা গিয়েছিল মানুষের। কিন্তু ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা হলো এবার মার্টিনেজের ক্ষেত্রে। চাতক পাখির মতো যারা মার্টিনেজের অপেক্ষায় রাস্তায় কিংবা হোটেলের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তারা হয়তো কালো কাচে ঘেরা গাড়ির ভেতরে থাকা মার্টিনেজকে কিছুটা ঝাপসা আলোয় দেখেছে। কিন্তু বেশিরভাগ সমর্থকেরই প্রিয় তারকাকে দেখার স্বাদ অপূর্ণ থেকে গেছে। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তারা। 

ফেসবুকে একজন লিখেছেন, `ডিসেম্বরের শীতের রাতে খোলা ময়দানে গাদাগাদি করে আমরা যারা খেলা দেখছি, গলা ভেঙ্গে গগনবিদারী চিৎকার করে আমরা যারা সাপোর্ট দিয়েছি - তাদের জন্যই আর্জেন্টিনার মানুষ, ম্যানেজমেন্ট, প্লেয়াররা আমাদের কথা জানে এবং তাদের জন্যেই এমি মার্টিনেজ আজ নিজ আগ্রহে বাংলাদেশে! এই মানুষগুলার সবাই ভালো এপার্টমেন্টে থাকে না, অনেকের বাসায় দামি টিভি কেনার সামর্থ্য নাই। অথচ আজকে তারাই এমির সাথে দেখা করার সুযোগ পেল যারা দামি এপার্টমেন্টের ড্রয়িংরুমে বসে খেলা দেখছে, বড়জোড় বিল্ডিং এর ছাদে প্রজেক্টরে দেখসে। কয়েকজন আবার সামর্থ্য ছিল বলে কাতারে গিয়ে সরাসরিই দেখছে। এই লোকগুলার জন্যে আর্জেন্টিনা আর এমি মার্টিনেজ বাংলাদেশকে চিনে নাই!

আমরা আমজনতা চিনাইসি! প্রোগ্রামটা করতে পারতো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। হোক বৃষ্টির দিন, বৃষ্টিতে ভিজার অভ্যাস এই পাগলদের আছে। কল্পনা করেন মাঠে এমি মার্টিনেজ রাউন্ড দিচ্ছে আর আর্জেন্টিনা জার্সি পড়া ৩০-৩৫ হাজার দর্শক "Thank you Emi" বলে চান্ট করছে - এইটার চেয়ে বেটার মোমেন্ট আর কিছু হতো না আজকের দিনে!' 

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন