তুরস্কের ইইউ সদস্যপদের স্বপ্নে ‘বিভ্রম’ দেখছে রাশিয়া

তুরস্ককে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ প্রাপ্তির আশা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইইউর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সদিচ্ছার অভাবই এই জোটে তুরস্কের প্রবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা।

ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, ইইউ তুরস্ককে সদস্যপদ না দিলেও রাশিয়া তার পুরনো বিশ্বস্ত মিত্রের পাশে থাকতে আগ্রহী।

মঙ্গলবার মস্কোতে এক নিয়মিত ব্রিফিঙে পেসকভ বলেন, ‘তুরস্ক নিজেকে পশ্চিমের অংশ বলে মনে করতেই পারে এবং এক্ষেত্রে তার যৌক্তিক ভিত্তিও রয়েছে। আমরা সবাই জানি, ইতিহাসের একটি লম্বা সময় তুরস্কের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল ইউরোপের। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়েও ইউরোপের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ট ছিল তুরস্ক।’

‘কিন্তু আমরা এও জানি— সময় বদলেছে। ইউরোপীয়দের কেউই এখন আর তুরস্ককে তাদের পাশে দেখতে চায় না। তাই আমরা মনে করি, তুরস্ক যদি ইইউর সদস্যপদ লাভের আশা করে থাকে— সেক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত তা দেশটির জন্য হতাশা বয়ে আনবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোর একমাত্র এশীয় সদস্য তুরস্ক। ভৌগলিকভাবে এই দেশটি ইউরোপের প্রবেশদ্বারও। ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে দরিদ্র এবং মুসলিমপ্রধান তুরস্ক ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো ইইউর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে।

তারপর গত ৩৫ বছর ধরে এই জোটে ঢোকার জন্য একাধিকবার আবেদন ও ইইউ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে তুরস্ক, কিন্তু জোটের সদস্যপদ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে দেশটির কাছে।

সর্বশেষ সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইইউ’র প্রতি শর্ত দেন— যদি ইইউ তুরস্ককে সদস্যপদ দেয়, সেক্ষেত্রে এই জোটের সদস্যরাষ্ট্র সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা দেবে তার দেশ।

কিন্তু ইইউ নেতারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এ ধরনের কোনো শর্ত তারা মানতে প্রস্তুত নন।

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় আর্থিকভাবে দরিদ্র হলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তুরস্কের অবস্থান স্বতন্ত্র এবং প্রভাবশালী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের পর সেই প্রভাব আরও বেড়েছে।

কারণ তুরস্ক একমাত্র দেশ, যার সঙ্গে রাশিয়া এবং ইউক্রেন— উভয়ের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর জাতিসংঘে এ পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যত নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে, সেগুলোর কোনোটিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি তুরস্ক।

আরও একটি তথ্য হলো, ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের মতো তুরস্কও ইউক্রেনে কিছু সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে, কিন্তু তা নিতান্তই নগন্য।

পাশাপাশি এই ‍যুদ্ধ বন্ধের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান নিজে উদ্যোগী হয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি সংলাপের আয়োজন করেছেন। সেই সংলাপ থেকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ বলেন, ইইউর সদস্যপদ লাভের জন্য এরদোয়ানের এই ব্যাগ্রতায় মস্কো খানিকটা আহত— তারপরও এখনও তুরস্কের সঙ্গে পুরনো মিত্রতা চালিয়ে যেতে আগ্রহী রাশিয়া।

‘স্বীকার করছি, আমাদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে— কিন্তু তারপরও আমরা তুরস্কের মিত্র এবং আশা করছি— সামনের দিনগুলোতে এই সম্পর্ককে আমরা আরও উচ্চতর জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবো।’

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন