যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফর নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন উজরা জেয়া।
একইসঙ্গে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
মঙ্গলবারের এই প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফরের পর দেশটিতে অধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের ওপর হামলা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপনার (মুখপাত্রের) মন্তব্য কী?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া ও অন্য কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি শ্রম অধিকার কর্মী, সুশীল সমাজের নেতা এবং মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গেও দেখা করেছেন।
তিনি বলেন, এসব বৈঠকে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং শ্রম অধিকার কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও বলেছেন। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন তিনি।
ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, বাংলাদেশ সফরকালে জেয়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের থাকার জায়গা পরিদর্শন ও তাদের সাথে দেখা করেছেন। এর পাশাপাশি সেখানে মানবিক কার্যক্রমের অংশীদার এবং বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি।
তার ভাষায়, ‘বার্মা ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের সহায়তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার ঘোষণা করেছেন জেয়া। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে মানবপাচারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও সুশীল সমাজের অংশীদারিত্বের বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’
এসময় সাম্প্রতিক নানা ঘটনার আলোকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ককে ওয়াশিংটন কীভাবে মূল্যায়ন করছে সে বিষয়ে আরেকটি প্রশ্ন তোলেন ওই সাংবাদিক। জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করছেন এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্বের বিষয়টি বোঝা যায়।
তিনি আরও বলেন, আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া তার সফরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। এর পাশাপাশি সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং শ্রম অধিকার কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছাড়াও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার কথাও বলেছেন তিনি।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই কারণেই আমরা সরাসরি বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সাথে যুক্ত হই। এগুলো দুই দেশের স্বার্থের অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি। আর এ কারণেই আমরা এসব বিষয় নিয়ে এখান থেকে কথা বলি।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম সমস্যা, মানবপাচার, বাণিজ্য এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল। বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং দলটি চারদিন ঢাকায় অবস্থান করে।
সফরে জেয়ার সঙ্গী হিসেবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুও বাংলাদেশে এসেছিলেন।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন