হিজাব ছাড়াই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ইরানের সেই নারী দাবা খেলোয়াড় স্পেনের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। মূলত হিজাব ছাড়াই টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর ইরানি কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
কারণ যেকোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে ইরানের নারী খেলোয়াড়দের হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বুধবার (২৬ জুলাই) এক প্রতিদেনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজাব ছাড়াই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখে পড়া ইরানের এক নারী খেলোয়াড়কে নাগরিকত্ব দিয়েছে স্পেন। সরসাদত খাদেমলশারিহ নামের এই নারী সারা খাদেম নামে বেশি পরিচিত এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি স্পেনে চলে যান।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে কাজাখস্তানের আলমাটিতে এফআইডিই ওয়ার্ল্ড র্যাপিড অ্যান্ড ব্লিটজ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ নামে একটি দাবা টুর্নামেন্টে হিজাব ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সারা খাদেম নামের ওই নারী দাবাড়ু। যদিও ইরানের কঠোর পোশাক নীতির অধীনে নারী খেলোয়াড়দের হেডস্কার্ফ পরা বাধ্যতামূলক।
পরে ইরানে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং জানুয়ারিতে তিনি স্পেনে চলে যান। আর বুধবার তাকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা জানায় স্পেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইরানে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করে। ইরানি কর্তৃপক্ষের নানামুখী দমন-পীড়নের পরও টানা কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এই পরিস্থিতিতে সারা খাদেমের মতো আরও বেশ কয়েকজন হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে সমর্থনের প্রতীক হিসেবে হিজাব পরিধানের নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন।
ইরানের নিয়ম অনুযায়ী, দেশটির নারীদের হেড স্কার্ফ বা হিজাব দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে হয় এবং তাদের হাত ও পা ঢিলেঢালা পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। নারী ক্রীড়াবিদরা যখন বিদেশের প্রতিযোগিতায় আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের প্রতিনিধিত্ব করেন তখনও তাদের ইরানি পোশাক কোড মেনে চলতে হয়।
২৬ বছর বয়সী সারা খাদেম রয়টার্সকে বলেছেন, তার দেশের ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনের সমর্থনে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন সেটির জন্য তার কোনও অনুশোচনা নেই।
স্পেনের সরকারী গেজেটে বলা হয়েছে, স্পেনের মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার খাদেমের ঘটনাকে ‘বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে’ নাগরিকত্ব দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।
উল্লেখ্য, হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় চলে যান ওই তরুণী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাহসা আমিনি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। তার মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন