রাশেদ-নূরকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার আগ্রহ কম

যুক্তরা‌ষ্ট্র ও কানাডায় পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খু‌নি রা‌শেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আগ্রহে ঘাটতি দেখছে বাংলাদেশ। এই দুই দেশ বিষয়টি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সুরাহার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এ কথা জানান। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরানোর অগ্রগতি কতদূর- এমন প্রশ্নে বাংলাদেশের তৎপরতা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অবস্থান জানান তিনি।

মুখপাত্র বলেন, খুনি রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে ফেরানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি এবং ওই দেশগুলোতে বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে খুনিদের ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছে। সব দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় যে অপরাধী সে সাজা ভোগ থেকে রেহাই পেলে তা শুধু ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্র বাধাগ্রস্ত করে না বরং এটা ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে।

সেহেলী সাবরীন বলেন, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আত্মস্বীকৃত এসব খুনি আইনকে ঢাল করে অপরাধের শাস্তি এড়িয়ে চলছে। তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সুরাহা করার বিষয়ে দেশ দুটির পক্ষ থেকে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার পররাষ্ট্র দপ্তর বরাবরই বলছে, এটি তাদের বিচার বিভাগ বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়।

 

বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে জানান মুখপাত্র সেহেলী।

তিস্তা নিয়ে ভারতের অবস্থান আশাব্যঞ্জক
সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত করতে তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু দ্রুত সমাধানের জন্য ভারত সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ বিষয়ে নয়াদিল্লি থেকে ঢাকাকে কোনো তথ্য জানানো হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয় মুখপাত্রের কাছে।

জবাবে সেহেলী সাবরীন বলেন, বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমাদের দিল্লি মিশন থেকে এ ব্যাপারে আরও অবগত হয়েছি। বিষয়টি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক এবং তাৎপর্য র্ণ। এ সংসদীয় কমিটিতে বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেসহ ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যরা রয়েছেন। এ ধরনের একটি সুপারিশ আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। এ সুপারিশকে কেন্দ্র করে ভারত সরকারের সঙ্গে আগামী দিনে আরও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি।

তিস্তায় খাল খনন নিয়ে কয়েক মাস আগে নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে জবাব চেয়েছে ঢাকা। এ বিষয়ে নয়াদিল্লি কোনো তথ্য শেয়ার করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ওরা কাজ করছে। আমাদের জানাবে। এটাই আমার কাছে সর্বশেষ আপডেট।

ইএমএফের বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে যা বললেন মুখপাত্র

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আমন্ত্রণে (ইএমএফ) সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টির দায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর দিচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে সেহেলী সাবরীন বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে যদি কোনো তথ্য চাওয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ সহায়তা করা হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ কার্যক্রমও গ্রহণ করা হবে।

আরাভ ইস্যুতে অগ্রগতি কতদূর?

পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফেরানোর অগ্রগতি জানতে চাইলে মুখপাত্র জানান, আইনের ব্যাপারে অনেক ডকুমেন্ট দরকার হয়। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কিছু ডকুমেন্ট শেয়ার করা হয়েছে। আরও কিছু তথ্য সরকারকে (আমিরাত) দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলমান রয়ৈছে। কিছু প্রক্রিয়াগত কাগজপত্র আদান-প্রদান করা হচ্ছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও বিএনপির আগুন সন্ত্রাস ইস্যু

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিরো আলম ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, তার কার্যক্রম ভিয়েনা কনভেনশনের মধ্যে পড়ে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ১৩ জন রাষ্ট্রদূতকে ভিয়েনা কনভেনশনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের নিজস্ব ব্যাখ্যা থাকতেই পারে। তবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তারা ভিয়েনা কনভেশন-১৯৬১ এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।

বিএনপির আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এটা কূটনীতিকদের জানাবে কি না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জবাবে সেহেলী সাবরীন বলেন, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশি দূতাবাসগুলোকে অবহিত করা হয়।

অন্যান্য প্রসঙ্গ
চীনের বিশেষ দূতের সফর এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, চীনের মুখপাত্র ৩০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট ঢাকা সফর করেন। চীনের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কাজ চলমান রেখেছে। প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার উপযুক্ত ও নির্দিষ্ট সময় বের করার কাজ চলবে এবং যথাসময়ে এটা শুরু হবে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সেহেলী সাবরীন বলেন, এ পেমেন্টের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়। আমাদের জানা মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়, ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন