আগস্ট, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ

মোঃ রাজু আহমেদ। | জিবি নিউজ || 

জর্জ ওয়াশিংটন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কামাল আতাতুর্ক ছাড়া আধুনিক তুরস্ক, নেলসন ম্যান্ডেলা ছাড়া বর্ণবাদহীন দক্ষিণ আফ্রিকা, মাহাথির মোহাম্মদ ছাড়া অধুনা মালয়েশিয়া কিংবা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছাড়া যেমন ভারতের ইতিহাস পূর্ণতা পায়না তেমনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান ভাস্কর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাস এবং অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান, একটি নাম, অসমাপ্ত জীবনের এক মহাকাব্যিক ইতিহাস। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধু অবিচ্ছেদ্যভাবেই জড়িয়ে; বলা চলে একটি আরেকটির পরিপূরক। যেনো বাংলা বর্ণমালায় ‌ব বর্ণের উৎপত্তির সার্থকতাই বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু লিখে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা(রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য) নামে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের বর্বর শাসকগোষ্ঠী যে মুজিবকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল, সেই মহান মানুষটিই পরবর্তীকালে এ মাটির  সকল মানুষের প্রাণের নেতায় পরিণত হন এবং তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র পরিচয়ের কথা কল্পনাতীত হয়ে দাঁড়ায়। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় বোধহয় এক চুলও বাড়িয়ে বলেননি,

যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা

গৌরী যমুনা বহমান

তত দিন রবে কীর্তি তোমার

শেখ মুজিবুর রহমান

১৯৪৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে আমৃত্যু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতি ও জাতীয়তাবাদের মুক্তি ও অধিকার ফিরিয়ে আনতে সর্বত্র এবং সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। টুঙ্গিপাড়ার সেই ডানপিঠে দূরন্ত মুজিবের মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ভবিষ্যতের যে আলো দেখতে পেয়েছিলেন তাতে এক ফোঁটাও ভ্রম ছিল না। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত তিনি এ জাতির পক্ষে ত্রাতার ভূমিকায় ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে তিনি কখনোই ক্ষমতার মোহে অন্ধ হননি বরং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং বাঙালি জাতিকে নিজস্ব জাতীয়তাবোধের স্বাদ দিতে সর্বদাই রাজনৈতিক সক্রিয়তায় ব্রত ছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরোধিতা করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ চৌদ্দ বছর জালিমের কারাগারের অন্ধকার কুঠুরীতে বন্দী থাকতে হয়েছে। ফাঁসির হুমকিতেও তিনি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ কিংবা এ জাতির অধিকার আদায়ের পক্ষে ইস্পাত কঠিন অবস্থান থেকে একচুলও পিছপা হননি। ক্ষমতা লোভ কিংবা কোন প্রলুব্ধকর মোহে গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে তাঁকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত করা যায়নি। তিনি বারবার বলতেন, এদেশের সহজ-সরল মানুষগুলোর ভালোবাসাই তাঁর জীবন ও আন্দোলনের শক্তি। যতদিন প্রাণ থাকবে ততদনি তিনি সেই মানুষগুলোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবেন না। শেখ মুজিবুর রহমান জীবন উৎসর্গ করে দেশ ও দেশের মানুষকে দেয়া সে প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন। এমনকি পরিবার, স্ত্রী-সন্তানদের থেকেও রাষ্ট্রের দায়িত্বকে তিনি বড় করে দেখতেন। জাগ্রত ভাবনায় দেশের স্বার্থের উর্ধ্বে আর কোন স্বার্থ কোনদিন তার হৃদয়ে স্থান পায়নি। 

 

পাকিস্তানের বর্বর শাসকগোষ্ঠী যখন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান থেকে বাংলা নামক শব্দটি উচ্ছেদে ব্যস্ত তখন তিনি বুক চিতিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক পথ নির্দেশক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণসভায় উপস্থিত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‌একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে বাংলা কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে, একমাত্র বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কিছুর সঙ্গে বাংলা কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। আজ আমি ঘোষণা করছি, এটা পূর্ব পাকিস্তান নয় শুধু বাংলাদেশ।

তাইতো সমস্বরে বলতেই পারি, 

তুমি জন্মেছিলে বলেই 

জন্ম নিয়েছিল একটি দেশ,

মুজিব তোমার আরেকটি নাম স্বাধীন বাংলাদেশ। 



 

কবির নির্মলেন্দু গুণের কবিভাষ্যে, 

গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।‘ 

বজ্রকন্ঠের এই ঘোষণাই বাঙালি জাগরণের মূলমন্ত্র ছিল। ’৭১ এর ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কাব্যিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত বিশ্বের সুপার পাওয়ার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সরাসরি বিরোধিতা করলেও শুধু বঙ্গবন্ধুর অসীম আত্মবল, মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, এবং তাঁর প্রতি বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবোধ এবং রাজনৈতিক নিষ্ঠা বিশ্ব মানচিত্রে নতুন করে ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্থান করে নেয় একটি নতুন রাষ্ট্র। আর সেটা আমাদের লাল-সবুজের পতাকাখোচিত গর্বিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। যে দেশের ইতিহাস পাঠ করতে গেলে এর অলিগলি মেঠোপথের পরতে পরতে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয়। 


 

আগস্ট এলেই মনের গহীনে হু হু করে কান্নার ঢেউ ওঠে, বেদনার নীল রঙ জাগে। এই আগস্টেই বাঙালি ও বাংলা ভাষা এমন কিছু মহীরূহকে হারিয়েছে যাদের শূন্যস্থান আর কোনদিন পূরণ হওয়ার নয়। তাদের প্রস্থান অগণিত মানুষকে নিভৃতে কাঁদিয়েছে এবং আজও ক্ষণে ক্ষণে শোকাভিভূত করে। অতীতের বছরগুলোতে মৃত্যু যাদেরকে বরণ করে নিয়েছে তাদের সকলের কথা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব না হলেও অন্তত ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট বাঙালি জাতির আত্মছবি অঙ্কিত করার নিপুণ কারিগর তথা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিরোধান, ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট সাম্য, দ্রোহ, প্রেম ও প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ, ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট আধুনিক বাংলা কবিতার বরপুত্র কবি শামসুর রহমানের মৃত্যু, ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসির রজ্জুতে দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে হত্যা স্মরণযোগ্য। তবে সকল মৃত্যুর দুঃখকে ছাপিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশি তথা গোটা বিশ্ববাসীর কাছে এক বিভীষিকার দিন। প্রতি বছরের এই দিনটিতে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে। শোকাবহ আগস্টের ১৫ তারিখে আমাদের বুকের চাপা কষ্টগুলো যেনো নতুন করে আবার জেগে ওঠে। আমরা বড় অভাগা জাতি, এমন বিশ্বনেতাকে স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল এই দেশেই। যে পাকিস্তানিরাও সাহস করেনি তাকে হত্যা করতে, স্বাধীন দেশে সেই বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়েছে। আগস্টের সেই ভয়াল-বর্বোরোচিত হত্যাকান্ড আজও আমাদেরকে মৃত্যুসম যন্ত্রণা দেয়। জাতি হিসেবে এ ঘটনা আমাদের গাদ্দারীর চিত্র সামনে আনে এবং বিশ্ববুকে অথর্বতা প্রকাশ করে। হাজার মাইল দূরে অবস্থান করা কিউবার জাতীয় নেতা ফিদেল কাস্ত্রো সেদিন ভারাক্রান্ত বদনে বলেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে। 

 

বিভিন্ন দেশের ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, কয়েকটি দেশের বিখ্যাত ব্যক্তিরা আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধী, আমেরিকার আব্রাহাম লিঙ্কন, জন এফ কেনেডি এবং কিং মার্টিন লুথার কিংবা লেবাননের কামাল জুমলত উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ধরণ বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট শেষ প্রহরে কয়েকজন বিপথগামী বর্বর সেনা কর্মকর্তার হাতে, তাদের বর্বরোচিত অভিলাষ পুরণের পথে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও নিহত হন। যদি সাময়িক সময়ের জন্য ধরেও নেই যে, রাজনৈতিক স্বার্থেই বঙ্গবন্ধুর বিরোধীপক্ষ তৈরি হয়েছিল কিন্তু আজও উত্তর পাই না, সে নৃশংসতায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্যান্য সদসস্যদেরকে কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল? সেদিন নিহতের তালিকায় যেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনি, পুত্র-পুত্রবধু তেমনি বঙ্গবন্ধুর ভাগনে এবং তার গর্ভবতী স্ত্রীসহ ছিলেন আরো অনেকে। দুর্বৃত্তদের নির্মম বুলেটে শেখ মুজিবুর রহমানের ৮ বছরের নিস্পাপ শিশুপুত্র শেখ রাসেলকে ঘাতকরা যেমন রেহাই দেয়নি তেমনি আব্দুর রব সেরাবানিয়াতের ৪ বছরের নাতি সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবুও রক্ষা পায়নি। শেখ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে জার্মানীতে অবস্থান করায় বঙ্গবন্ধুর দুই তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সেদিনের নৃশংসতা থেকে প্রাণে বেঁচেছিলেন বলেই আজকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছি। স্বপ্ন দেখছি, সম্মৃদ্ধ-উন্নত সোনার বাংলাদেশের। একটু কল্পনা করুন, বঙ্গবন্ধু যদি আর দুই দশক এই বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবার, কাজ করার সুযোগ পেতেন তবে আমরা সেই কবেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারতাম। 

হাসান মতিউর রহমানের মত একসুরে বলতে ইচ্ছা করে,

যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই। 

যদি রাজ পথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।

তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা। 


 

সাহিত্যের সম্মৃদ্ধির জন্য যেমন রবীন্দ্রনাথ-নজরুলদের প্রয়োজন ছিল তেমনি পাকিস্তানের শোষণ থেকে জাতিকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বীকার করা কিংবা খাটো করে দেখা জাতীয়তাবোধক অস্বীকার করার নামান্তর। স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন রণাঙ্গনে লড়াই করার শক্তি-সামর্থ্য দেশের কোটি মানুষের ছিল কিন্তু সেই সকল যোদ্ধাকে সমন্বয়-সংগঠিত করে প্রেরণা দেয়া এবং কৌশল বাতলানোর নেতৃত্বের গুণাবলী কেবল এক ও এককভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যেই নিহিত ছিল। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে যে মহান মানুষটিকে স্থান দেয়ার আবশ্যকতা ছিল সেই তাকে কেন্দ্র করেই আমরা হীনস্বার্থে রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি করেছি। এতে বঙ্গবন্ধুর লাভ-ক্ষতি কতুটুকুন হয়েছে জানিনা তবে আমরা যে হীনমন্যতা দেখিয়েছি, বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করেছি তাতে বোধকরি সন্দেহ নাই। পশ্চিম জার্মানীর নোবেলজয়ী নেতা উইলি ব্রানিডিট বোধহয় আমাদের সম্পর্কে অসত্য উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘মুজিব হত্যার পর আর বাঙালিকে বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে। 

 

     

যে মানুষটি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য তাঁর জীবন-যৌবন উৎসর্গ করলেন তাকে আমরা কতোটুকু ধারণ করতে পেরেছি? স্বার্থের বাইরে গিয়ে কতোখানি ভালোবাসতে পেরেছি? দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে ত্রিশ লাখ শহীদের বুকের তাজা রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম-আভ্রুর বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পরে যখন তিনি দেশের গঠনমূলক কাজ শুরু করলেন ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং একদল বিপথগামী সৈন্য আমাদের আলোর সবচেয়ে বৃহত্তম জায়গাটি নিভিয়ে দিল। যে ব্যক্তিটি আমাদরকে নতুন ঠিকানা দিলেন, নতুনভাবে বাঁচার আশা দিলেন, সকল প্রত্যাশা পূরণের জন্য নতুন ভোর দিলেন, রাষ্ট্র মেরামতে কিছুদিন সময় চাইলেন, তাঁর খুনীদেরকে বিচার করতে আমাদের দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ লেগেছে। অন্তত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সকল খুনীদের শাস্তি এখোনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

 

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের আটচল্লিশ বার্ষিকে দাঁড়িয়ে দীপ্ত কণ্ঠে আমাদের শপথ নিতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে মুখের চাইতে বুকে বেশি ধারণ করতে হবে। সকল অপশক্তিকে মোকাবেলা করে তাঁর সকল অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এই দেশের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আমলা কিংবা নানা পেশাজীবী লোকজন তথা আমরা শোক প্রকাশের জন্য সহজ পথটা বেছে নেই । সেই তুলনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চাকারী কম। অথচ এই আদর্শের চর্চা করত না পারলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা দেখানো হয় না। তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানে আমাদেরকে সোনার মানুষের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হতে হবে। মুজিবের দেশে যারা মুজিবের নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করেছিল তাদের সাথে আপোস করলে বঙ্গবন্ধুর পবিত্র আত্মা কষ্ট পাবে। বঙ্গবন্ধুকে আমরা আর কখনোই ফেরত পাব না। শরীরী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলেও তার আদর্শকে হত্যা করা কি আদৌ সম্ভব হয়েছে? প্রশ্ন উঠতে পারে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কী? আমি তো বলেবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানে তার দেশপ্রেম, তার আপোসহীনতা, তার সততা, সব মানুষের কথা ভাবা, মানুষের জন্য অসীম ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও শোষণমুক্তির এমন এক আদর্শ যা চেপে রাখা যায়নি এবং যাবে না। শেষবাক্যে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, একটা মানুষ দেশকে কী পরিমানে ভালোবাসলে বলতে পারেন, আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, আমি তাদের খুব বেশি ভালোবাসি। যে মানুষটি আমাদের এতোটা ভালোবাসতেন, আমাদের কি উচিত না তাকে আরও অধিক ভালোবাসা?

সবশেষে শুধু একটুকুই বলবো-

ভুলি নাই বাবা, ভুলি নাই তোমায়, ভুলি নাই তোমার নাম

বুকের তাজা রক্তে হলেও রেখে যাব তোমার মান 

 

জয় বাংলা  

 

মোঃ রাজু আহমেদ।

প্রভাষক, দর্শন।

মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজ, পিরোজপুর।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন