রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্র নীতিতে অটুট থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সংকট সমাধানের পক্ষে। আমরা এ অঞ্চলে প্রক্সি ওয়ার চাই না।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মোমেন।
এর আগে সন্ধ্যায় সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেভরভের এটাই প্রথম ঢাকা সফর। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।
নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন উপায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নিয়ে ঢাকার মন্তব্য জানতে চাওয়া হয় ড. মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আছে। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ -আমরা ভারসাম্য কূটনীতি মেনে চলার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিই। আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।
সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ সব সমস্যার সমাধান করতে চায় জানিয়ে মোমেন বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, আমরা এ অঞ্চলে প্রক্সি ওয়ার চাই না। আমরা সব সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে করতে চাই। এটাই আমাদের অবস্থান।
মস্কোর সঙ্গে ঢাকার গভীর সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন মোমেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া আমাদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গঠনে তারা আমাদের অনেক অনেক সাহায্য করেছে। আমাদের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক। রাশিয়া আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করছে।
প্রায় একঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা আলোচনার মধ্যে অনেক ইস্যু তুলে নিয়ে এসেছি। আমাদের ইস্যু ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এটা মোটামুটি যথা সময়ে শেষ হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ইস্যুতে তারা আমাদের সঙ্গে একাত্ম। তারা বলেছে, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আমরা তাদের সহায়তা চেয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়ানোর কথা বলেছি। এ দেশে অনেক স্কোপ রয়েছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, হাইটেক পার্ক রয়েছে -এগুলোর সুবিধা তারা নিতে পারেন। তারা বলেছেন, নিউক্লিয়ার ফুয়েল টেকসইভাবে অনেক দিন দেবেন।
রাশিয়া বাংলাদেশকে এলএনজি এবং ক্রুড অয়েল আনার প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, তারা বলেছেন, তাদের দেশ থেকে আমরা এলএনজি আনতে পারি। তারা আমাদের প্রস্তাব করেছেন, তাদের দেশ থেকে ক্রুড ওয়েল আনতে পারি।
ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান ড. মোমেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য একটি অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে -সেটি তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, তাদের দেশে ইকোনমিক একটা কমিশন আছে, আমরা তার সুবিধা নিতে চাই। বাকি রাষ্ট্র যারা সদস্য, বিশেষ করে তাজাকিস্তান তাদের অনুমতি লাগবে। সবাই মিলে যেন সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু তুলে ধরেছি। তিনি এ ব্যাপারে খুব আন্তরিক। এগুলোর ব্যাপারে দেখবেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এখন নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খাওয়ার টেবিল মোমেন-ল্যাভরভ জাতিসংঘ, আঞ্চলিক ও অন্যান্য বৈশ্বিক ফোরামে সমর্থন ও সহেযাগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ইঙ্গিত রয়েছে।
ল্যাভরভ ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা থেকে নয়া দিল্লির উদ্দেশে রওনা করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন