দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত ‘দিল্লি ঘোষণাপত্র’কে ভারতের কূটনৈতিক বিজয় এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব হিসাবে দেখা হচ্ছে।
তবে সম্মেলনের কয়েকদিন আগেও এ ঘোষণাপত্র নিয়ে শঙ্কা ছিল। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আগের সম্মেলনে রাশিয়ার বিষয়ে যে কঠোর ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছিল এবারও যদি তার ধারাবাহিকতা না থাকে তবে বেঁকে বসতে পারে পশ্চিমারা, একদিকে ছিল এমন শঙ্কা। অন্যদিকে ওই ধরনের ভাষা ব্যবহার করলে বেঁকে বসবে রাশিয়া।
ভারত ইউক্রেন যুদ্ধের অত্যন্ত জটিল ইস্যু পাশে রেখেই একটি যৌথ বিবৃতি জারি করতে সক্ষম হয়েছে, যা ইউক্রেন ব্যতীত সব পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে।
এ বিবৃতির সাতটি অনুচ্ছেদে ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। তবে কোথাও রাশিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে রাজি হওয়ার পেছনে এক ধরনের সমঝোতা রয়েছে।
সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিশ্বের সব নেতার সঙ্গে বেশ সাবলীলও দেখা যায়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে তার ‘হাস্যোজ্জ্বল’ একটি ছবিও আসে।
বিশ্ব মিডিয়া তাদের প্রতিবেদনে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং জি-২০ সম্মেলনের সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেছে।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা এনবিসি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, জি-২০-তে ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাবের পাশাপাশি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগও দেখা গেছে।
দুদিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধানরা নয়াদিল্লিতে গিয়েছিলেন। সম্মেলন ঘিরে দিল্লি কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তোলা মোদি ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ছবি নিয়ে আলোচনা চলছে।
এনবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই বৈঠক কেবল ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবই দেখায়নি, দেশের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা, বিশেষত সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও দেখিয়েছে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং আমেরিকার মিত্র। অন্যদিকে, ভারত পশ্চিমা দেশগুলো এবং রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করেছে।
এনবিসি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ভারত বামপন্থী চীনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপরীতে পাল্টা শক্তি।
এনবিসি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে— সাংবাদিকদের সম্মেলনে আসা নেতাদের থেকে দূরে রাখা হয়েছে। নয়াদিল্লিতে পোস্টারে ভারত নিজেকে গণতন্ত্রের জননী ঘোষণা করেছে, কিন্তু সম্মেলনে শত শত সাংবাদিককে নেতাদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
এনবিসি লিখেছে— শুক্রবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক কভার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি কোনো সাংবাদিককে।
সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে রাশিয়ার নয়া দিল্লি ঘোষণাকে ‘সফল’ এবং এ নিয়ে ইউক্রেনের অসন্তোষের কথা উল্লেখ করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বিবৃতিও প্রকাশ করেছে সিএনএন।
ঘোষণা প্রকাশের একদিন পর ল্যাভরভ বলেন, এই সম্মেলন শুধু ভারতের জন্যই নয়, আমাদের সবার জন্যই সফল হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ একটি জটিল ইস্যু এবং এটি সম্পর্কে পশ্চিমা, রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়— এই বিবৃতি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য একটি ‘গেম চেঞ্জার’ ছিল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের নরম অবস্থানকেও প্রতিফলিত করে।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন