চুনারুঘাটে নেচে-গেয়ে কারাম উৎসবে মাতোয়ারা চা-বাগানের জনগোষ্ঠীরা

এম এস জিলানী আখনজী :: চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥

চা-বাগান ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশ পরম্পরায় যুগ-যুগ ধরে প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারও প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষের সমাগমে অত্যান্ত ঝাকজমকপূর্ণভাবে নালুয়া চা বাগানের আদিবাসী ও চা-শ্রমিকসহ বাগানবাসীরা এই কারাম উৎসব পালন করেছে। এ উপলক্ষে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা বাগানের খেলার মাঠে চা-বাগান জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব কারাম উৎসব উদযাপন করেছে নলুয়া চা-বাগানের জনগোষ্ঠী ও বাগানের আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনরা। ঢাকঢোল পিটিয়ে ও পূজা–অর্চনার মধ্যে দিয়ে এ উৎসবে মেতে ওঠেন তাঁরা। এই উৎসবের বিভিন্ন আচারঅনুষ্ঠানে বাবা ও ভাইদের মঙ্গল কামনা করা হয়। এদিন সকাল থেকে চা-বাগানে কারাম উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করা হয়। দুপুরে শুরু হয় মূল আয়োজন। এ কারাম উৎসব চলে দিনব্যাপী এবং শেষ হয় রাতে। কারাম উৎসব ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নলুয়া ফুটবল খেলার খোলা মাঠে কারাম ডাল পুঁতে তাতে নানা ধরনের ফুল বেঁধে দেওয়া হয়। প্রদীপ জ্বালিয়ে নানা আয়োজনে চলে এ উৎসব। এতে অংশ নেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ। পরে বিকেল ৫ টায় চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা-বাগানের চা-শ্রমিক, আদিবাসীবৃন্দ, চা বাগানের সকল জনগোষ্ঠীর আয়োজনে এ উৎসবে হবিগঞ্জের সুরমা, তেলিয়াপাড়া, সাতছড়ি, বেগম খানসহ ২৪ টি বাগানের সকল জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়। ঐতিহ্যবাহী কারাম পূজা উৎসবটি দেখার জন্য চা জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সমবেত হন। এতে সুরমা, দেউন্দী, লালচান্দ, তেলিয়াপাড়া, সাতছড়ি, বেগম খান ও আমু-নালুয়া চা-বাগানসহ বিভিন্ন বাগান থেকে আগত ওরাওঁ, মুন্ডা, ঝড়া, হাড়িয়া, বারাইক, কর্মকার, ভূমিজ, তুরিয়া, নোহানী ও চাঁওতাল সম্প্রদায়সহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের ১৫-১৭টি নৃত্যের দল অংশ নেয়। এ কারাম উৎসবে তারা তাদের নিজেদের ভাষা, সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন। আমুরোড হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক রামেস্বর ভৌমিকের সঞ্চালনায় ও কারাম উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ভূপেন্দ্র ওরাওঁ এর সভাপতিত্বে আয়োজিত উৎসবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হরেন্দ্র ওরাওঁ। উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল কাদির লস্কর। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, সাবেক চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লৎফুর রহমান মহালদার, নালুয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখারুল এনাম, সিলেট মহানগর হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ আহমেদ, বাগান সহকারী ব্যাবস্থাপক সাব্বির আহমেদ, চুনারুঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ জামাল হোসেন লিটন, আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ আলাউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় চা-শ্রমিক নেতা নৃপেন পাল, মেম্বারদের মধ্যে ছিলেন নটবর, মাখন গোষামী, রতন মুন্ডা, করাম উৎসবের উপদেষ্টা কপিল উরাং ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুবাশ ঝরাসহ চা-বাগান এবং আদিবাসী সমপ্রদায়ের লোকজন প্রমুখ। পরে সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়। কারাম উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি বলেন, ‘কারাম একটি গাছের নাম। চা-বাগান জনগোষ্ঠীর ও আদিবাসী সম্প্রদাযের মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতিবছর বংশ পরম্পরায় পালন করা হয় এই পূজা। এ উৎসব ঘিরে প্রতিবছর মুখর হয় চুনারুঘাট উপজেলার চা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। উৎসবে সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। কারামের ডাল কেটে অস্থায়ী মণ্ডপে পুঁতে রেখে নালুয়া চা-বাগানের ফুটবল মাঠে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও গল্প বলার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শুরু হয়। স্থানীয় সুবাশ ঝরা বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এ উৎসব পালন করে থাকি। এ উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করি। আমাদের নিজের বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ও দেশের মানুষের মঙ্গল কামনায় আমরা এ কারাম পূজাটি করে থাকি। আমরা মনে করি এ পূজার মাধ্যমে আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসব নিয়ে উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি হবিগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনের এমপি প্রার্থী এডভোকেট আকবর হোসেন জিতু বলেন, চা-বাগান জনগোষ্ঠীর কারাম পূজাটি ঐতিহ্যবাহী বড় একটি উৎসব। প্রতি বছরে তারা নানা আয়োজনে এ উৎসবটি পালন করে থাকেন। তাদের সব আয়োজনে উপজেলা আওয়ামিলীগ ও প্রশাসন সঙ্গে ছিল, এরপরেও তাদের সব আয়োজনে আমরা পাশে থাকবো।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন