জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভে জেএসএফ বাংলাদেশ : নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে

হাকিকুল ইসলাম খোকন, সিনিয়র প্রতিনিধিঃ২২ সেপ্টেম্বর  ২০২৩, নিউইয়র্কে  অনুষ্ঠাত ৭৮তম জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে প্রধানমনএী শেখ হাসিনার ভাষণ দানকালে জাতিসংঘের সামনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে  বিক্ষোভ করে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম (জেএসএফ) বাংলাদেশ ।বিক্ষোভে  দেশ জাতি , ও জনগণের অধিকার নিয়ে বক্তব্য রাখেন হাজি আনোয়ার হোসেন লিটন , গোলাম মৌলা , খন্দকার নুরুল হুদা সহ অন্যান্য অনেক নেতৃবৃন্দ।  খবর বাপসনিউজ বিক্ষোভে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম জেএসএফ বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ বলেন ,  এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল আওয়ামী লীগ । '‘বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার ও ধংসাত্মক এ সরকারকে বিদায় করে সাফল্য ও সমৃদ্ধের সত্যিকারের স্বাধীন বাংলাদেশ পূনর্গঠন করতে হবে। আমরা এমন একটি পরিবর্তন চাই, যা হবে নিজের, পরিবারের, সমাজের এবং দেশের জন্য কল্যাণকর। আর এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে হবে।’ দুঃশাসন থেকে উৎপন্ন হয় গুম ও বিচার বহিভূর্ত হত্যার মত মানবতা বিরোধী হিংস্রতা। স্বৈরচারী সরকারের গড়ে তোলা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিরোধী দলের প্রতিবাদী নেতা-কমীর্দেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া এখন নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা বিরোধী দল ও মতের মানুষদের অল্পদিন অথবা দীর্ঘদিন কিংবা চিরদিনের জন্যে নিখোঁজ করে দেয়। 

বিক্ষোভে জেএসএফ বাংলাদেশ এর হাজি আনোয়ার হোসেন লিটন   বলেন, সরকার বলছে তাদের অধীনে আগে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এবার সুষ্ঠু হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা  ও আজ নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রমান করেছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে আমাদেরকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।আমাদের দাবি একটাই- এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। তাই এখনই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় লোক দিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন।

হাজি আনোয়ার হোসেন লিটন   বলেন, দেখা যায় একজন শিক্ষামন্ত্রীর নামে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠে, ব্যাংক থেকে বিশেষ বিবেচনায় ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এটা কোন দেশ? এই দেশে যদি আমরা পরিবর্তন না আনতে পারি, তাহলে এদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে। দেশে গণতন্ত্রহীনতা, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও বিরোধীমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলছে। জনগণের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এ জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সারাবিশ্ব বলছে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু সরকার এটাকে আমলে নিচ্ছে না। তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া।

   বিক্ষোভে জেএসএফ বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ বলেন ,  কেউই দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না এই বিধান আনা উচিত।  ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে একদফার আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনে গায়েবি মামলার আসামিদের তালিকায় কবরে থাকা মৃত ব্যক্তিরা আছেন। প্রবাসীদের ও নাম আছে আসামিদের তালিকায়।  এটাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। 

আওয়ামী লীগের লোকও এদেশের নাগরিক, বিএনপির লোকও এদেশের নাগরিক। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এদেশের নাগরিক।  ডিসি-এসপিরা হলো সরকারের কর্মচারী। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা জনগণের বেতনের কর্মচারিকে বানিয়েছে দলীয় কর্মী।  ডিসি-এসপিরা, ওসিরা এখন আওয়মীলীগের পক্ষে ভোট চায়। আজকে জনগণ রাস্তায় নেমে যে আওয়াজ তুলছে, তাকে রুখে দেয়ার ক্ষমতা এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নেই। তাদের এখন বিদায় নিতেই হবে। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার অবৈধ পথে ক্ষমতায় এসে এদেশের জনগণের সকল অধিকারকে হরণ করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এই পরিস্থিতিতে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে আনার দাবি শুধুমাত্র  কোন একটি রাজনৈতিক দলের  নয়, এটা গোটা বাংলাদেশের জনগণের দাবি। আর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের জনগণ রাজপথে নেমে এসেছে। দেশের জনগণ পরিবর্তন চাই, এই স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের হাত থেকে মুক্তি চাই। তাই সরকারকে বলতে চাই, জনগণের সকল ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিন। বিদেশে ধর্ণা দিয়ে এবার আর লাভ হবে না। ভোট ডাকাতি করে বাংলাদেশের জনগণের সাথে এবার প্রতারণা করা যাবে না। তাই বিদেশিদের কাছে ধর্না নয়, তত্বাবধায়ক  সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন অন্যথায় জনগণই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে  পতন নিশ্চিত করবে। 

 বিক্ষোভে জেএসএফ বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ বলেন ,  তত্বাবধায়ক  এর দাবিতে আওয়ামীলীগ লাগাতার হরতাল দিয়ে দেশ অচল করেছিল।  জাতীয় পাটি ও জামায়াতকে নিয়ে একসাথে  বৈঠক করে লাগাতার আন্দোলন করেছিল আওয়ামীলীগ।  কিন্তু এখন  তারা  তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। অবিলম্বে  সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে  তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ বর্তমান সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বর্তমান সরকারকে বিদায় নিতে হবে। 

বিক্ষোভ সমাবেশে জেএসএফ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দরা বলেন ,   সরকারের অযোগ্যতা, অক্ষমতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে জনগণ মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিত্যপণ্যের মূল্য হুহু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের সামজস্য নাই। এমনকি ডিম-আলুও আমদানি করার ব্যবস্থা হচ্ছে। রফতানি আয় প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। আমদানিখাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দেশে নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। কাঁচামালের অভাবে ইতোমধ্যে অনেকগুলো কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন অর্ডারের অভাবে কয়েকশত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। বেকারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের বাঁচা-মরার লড়াই, এদিকে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নাই।দেশ বরেণ্য আলেম ওলামাদের দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে আটক রেখেছে। আমরা অবিলম্বে  শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সহ সকল আলেম ওলামাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। 

 বিক্ষোভে জেএসএফ বাংলাদেশ এর  নেতৃবৃন্দ আরো  বলেন ,   সরকার আইন আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনীতিবিদদের সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করতে চায়  । এজন্য হঠাৎ করেই বিরোধী নেতৃবৃন্দের সকল মামলায় সুপারসনিক গতি দেখা যাচ্ছে। কোর্টে আইনজীবীদেরকে জেরা করার সময় দেওয়া হচ্ছে না। কোনো কোনো আসামির আইনজীবীকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। মামলার সাক্ষীদের বিশেষ ব্যবস্থায় স্টেনোগ্রাফারদের মাধ্যমে জবানবন্দী টাইপ করা হচ্ছে। নিয়ম হচ্ছে উন্মুক্ত আদালতে সাক্ষী জবানবন্দী দেবেন, সেটিই রেকর্ড হবে। কিন্তু সরকারের নির্দেশে এসবের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঢাকার আদালগুলোতে বিচারকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এতেই প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় মাটি নেই, এটা তারা ভালো মতোই বুঝে গেছেন। তাই এখন বিরোধীদের আটকিয়ে ষড়যন্ত্র করে আবারো কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় সেই অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

 ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা তুলে ধরে  বক্তারা বলেন ,  ক্ষমতাসীনেরা বলছে এখন ব্যালট বাক্স স্বচ্ছ এবং জাল ভোট দিয়ে বাক্স পূরণের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ভোটের আগের রাতেই ভোট  হয়ে যায়।  ক্ষমতাসীন সরকারের অনেক এমপি মন্ত্রীদের নিজের ভোট নিজেই দেন নাই।  তারা খুন-গুম-নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ১৫ বছরেরও তাদের ক্ষমতার লোভ যায় না। হিটলার, মুসোলিনি, আইয়ুব খান কেউ টিকে থাকতে পারে নাই। সবাইকেই ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। তাদের সাজা পেতে হয়েছে। নিম্ন ও  উচ্চ আদালত এখন সরকারের দমন নিপীড়নের হাতিয়ার। এই হাতিয়ারকে ঠিক রাখতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে।

  বিক্ষোভে জেএসএফ বাংলাদেশ এর  নেতৃবৃন্দ আরো  বলেন ,   কারো কোনো মতামত না নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে। এটি ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’। ফ্যাসিবাদী সরকার সাংবাদিক ও দেশের জনগণকে ভয়ে রাখতে এ আইন প্রণয়ন করছে। আমরা এই আইন বাতিল চাই। বক্তারা বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে সরকার নব্য বাকশাল কায়েম করেছে। বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার। ফ্যাসিবাদী তত্ত্বকে টিকিয়ে রাখতে ডিজিটাল আইন করেছে। 

বিক্ষোভে জেএসএফ বাংলাদেশ এর  নেতৃবৃন্দ আরো  বলেন ,  ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে চট্টগ্রামের জনসভায় বর্তমান সরকারপ্রধান বলেছিলেন যে, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। অথচ তিনিই এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।সরকারের নেতারা বলে বেড়ায় যে, তারা দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছে। তারা যদি উন্নয়ন করে থাকে তাহলে এত ভয় কেন। উন্নয়ন করে থাকলে তো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই জয়ী হবার কথা। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, তারা উন্নয়নের নামে জনগণের অর্থ লুট করেছে। জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন