যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য আরো স্পষ্ট করেছে দূতাবাস। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রদূত হাসকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘আমরা (ভিসা বিধি-নিষেধ) নীতিটি সরকারপন্থী, বিরোধী দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য বা গণমাধ্যমের সদস্য নির্বিশেষে যে কারো বিরুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে প্রয়োগ করছি (বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার দায়ে)।’
এর আগে গতকাল রবিবার ঢাকায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের একটি অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ভিসানীতির কারণে বাংলাদেশের গণমাধ্যমও বিধি-নিষেধের আওতায় আসতে পারে বলে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে কেউ ভিসানীতির শিকার হতে পারে।
এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা দেখা হচ্ছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে। এটি কোনো স্বাধীন দেশের ওপর হস্তক্ষেপ নয়। তিনি বলেন, কতজনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো তা মুখ্য বিষয় নয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার গত রাতে এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করেছেন এমন যে কারো ওপর মার্কিন ভিসানীতির আওতায় ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করার উদাহরণ হিসেবে তিনি ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত ও সংগঠন করার অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ বা গণমাধ্যমকে মত প্রকাশ বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্নকারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ব্যাপক ও যথেষ্ট মাত্রায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।
এর আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠ’র প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোন কোন ব্যক্তির ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে এবং তাদের সংখ্যা কত তা প্রকাশ করবে না।
ভিসানীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন নামের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র এ কথা জানান।
ভিসানীতির আওতায় পড়েছেন এমন ব্যক্তিদের একটি তালিকা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে বলেও একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কাকে নিষিদ্ধ করেছে সেটি আমরা জানি না।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির আওতায় চিহ্নিত কোনো বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বা ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন।
এমনকি ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও ভিসা বিধি-নিষেধের আওতায় পড়তে পারেন।
ভিসা বিধি-নিষেধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে কি না জানতে চাইলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানাতে পারব না। আমি আপনাকে যা বলতে পারি তা হলো, আমরা আমাদের গতিশীল ও বহুমুখী সম্পর্কের অংশ হিসেবে সব ধরনের সমস্যা সম্পর্কে যোগাযোগ করি।’
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘আমরা এই ভিসা বিধি-নিষেধের মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের নাম বা সংখ্যা জনসমক্ষে প্রকাশ করব না। মার্কিন আইন অনুযায়ী ভিসার রেকর্ড গোপনীয়।’
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন