বুলবুল আহমদ, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ- হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল গ্রামের এক গৃহ বধুকে মাসে ৫০হাজার টাকা বেতনে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে একটি সিএনজি যোগে কয়েকজন যুবক নিয়ে যায় কুর্শি ইউনিয়নের ঘোলডুবা গ্রামে। তার স্বামী বাড়িতে এসে স্ত্রীকে না পেয়ে তার আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে খুজাখুজি করে না পেয়ে অবশেষে দুইদিন পর স্ত্রী পাওয়ার আশায় নবীগঞ্জ থানায় নিখোঁজ হিসাবে একটি সাধারণ ডায়রী করে তার স্মামী। পরে বিভিন্ন স্থানে ধর্ষন করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আউশকান্দি হীরাগঞ্জ মধ্য বাজার আরিফ হোটেলে নিয়ে এসে কৌশলে তারা পালিয়ে যায়। ধর্ষিতা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তাদের না পেয়ে সে তার স্মামীকে অন্য একজনের মোবাইল ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে তার স্মামী তাৎক্ষণিক ভাবে আউশকান্দিতে এসে তার স্ত্রীকে নিয়ে যে স্থানে ধর্ষকরা চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই স্থানে গিয়ে ধর্ষক কাউকে না পেলেও তাদের সাথে থাকা এক জনৈক মহিলাকে পেয়ে জিজ্ঞাস করলে ঐ মহিলা ধর্ষকদের নাম ও ঠিকানা বলে দেয়। পরে তারা স্বামী- স্ত্রী মিলে নবীগঞ্জ থানায় গেলে পুলিশ তাদেরকে বলে আগে হাসপাতাল যাও পরে দেখা যাবে। এসব কথা শুনে তারা নবীগঞ্জ হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাদের পরিক্ষা নিরেক্ষা করে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে প্রেরন করেন। সেখানে পরিক্ষা শেষে মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতে ৫ জনের উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে ফৌজদারি ও জজ কোর্টের এডভোকেট মোঃ শরীফ উদ্দিন কামালের মাধ্যমে ১৮/১০/২০২০ ইংরেজী তারিখে একটি মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর F.I.R গণ্যে জন্য হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নবীগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়। উক্ত মামলাটি নবীগঞ্জ থানায় আসার পর থেকে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আসামীরা বিভিন্ন স্থানে দৌড় ঝাপ শুরু করেছে। গতকাল রবিবার বিকালে নবীগঞ্জ থানার ওসি আজিজুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলাটি রাতেই এফআইআর গণ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলা ও ভিকটিমের সূত্রে আরো জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল গ্রামের মহিবুর রহমানের স্ত্রী এক সন্তানের জননী মৌসুমী বেগম (২৩)। সে গত ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকাল অনুমান সাড়ে ৪টার সময় রিক্সা যোগে শেরপুর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পারকুল গ্রামের মেম্বার দুলাল মিয়ার বাড়ির সামনে আসা মাত্রই আসামীগন তাকে জোর পূর্বক একটি সিএনজি যোগে অপহরণ করে নিয়ে যায় একটি অজ্ঞাত স্থানে। পরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ৪দিন আটক করে আসামীগন পালাক্রমে ধর্ষণ করে ১ সন্তানের জননীকে। ধর্ষকরা থানায় জিডির খবর পেয়ে ৪র্থ দিন আসামীগণ স্থানীয় আউশকান্দি হীরাগঞ্জ মধ্য বাজার আরিফ রেস্টুরেন্টে সামনে সিএনজি থেকে নামিয়ে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে ভিকটিমের স্বামী মুহিবুর রহমান এসে তাকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়ে ধর্ষনের আলামত সহ বিজ্ঞ আদালতে একটি ধর্ষন মামলা করেন। উক্ত ধর্ষণ মামলার আসামীরা হচ্ছেন, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউপি সদস্য দুলাল আহমদ (৪০), সেবুল মিয়া (২৮) ,সহিদুল মিয়া (২৫), জিবু মিয়া (২৭), আউশকান্দি ইউনিয়নের বির্তকিত চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন (৫০) সহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন। ৭/৯(৩)/৩০ ধারায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক হবিগঞ্জ জেলা দায়রা ও জেলা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী গত ১৮ অক্টোবর নালিশকারীর দরখাস্ত ও জবানবন্দী পর্যালোচনা করে নির্দেশে তিনি বলেন, নালিশের অভিযোগ অপরাধ যোগ্য, তাই হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের মাধ্যমে নবীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জকে মামলা এফ.আই.আর করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে মামলা রুজু করে প্রতিবেদন অত্র ট্রাইব্যুনালে প্রেরন করার জন্য নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে মামলা বাদীর ধর্ষিতার স্বামী মুহিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান- মেম্বার সহ অন্যান্যরা আমার স্ত্রীকে চাকুরীর দেয়ার কথা বলে একটি সিএনজি যোগে এনে ধর্ষন করে ৪দিন পর আউশকান্দিতে এনে ফেলে যায়। এতে আমি বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করলে আমার মামলার সাক্ষীদেরকে চেয়ারম্যান- মেম্বার ও লোকজন নানা রকম হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এবং স্বাক্ষী না দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এমনকি তাদের কাছ থেকে এভিডেভিড করার চেষ্টা করছেন। আর আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। সে আরো জানায়, তারা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়াতে, তাদের লোকজন দিয়ে আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। এতে আমি আমার নিজ বাড়িতে যাওয়ার মত সাহস পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে ধর্ষিতার সাথে আলাপ কালে সে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে, আমাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫০ হাজার টাকার চাকুরি দেয়ার কথা বলে উপরোক্ত আসামীরা পালাক্রমে ধর্ষন করে। আমি এদের ফাঁসিি চাই।
এ ব্যাপারে, ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন পরে কথা বলছি।
এ ব্যাপারে, ইউপি সদস্য দুলাল আহমদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই রকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে মিথ্যা মামলা জড়ানো হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন