সপ্তমবারের চেষ্টায় স্কটল্যান্ডকে মুক্ত করেছিলেন রবার্ট ব্রুস। এই গল্পের মোরাল পাঠ্যপুস্তকে চিরস্থায়ী হয়ে আছে। কিন্তু সাতবারের চেষ্টায়ও বিশ্বকাপে ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। আজ আহমেদাবাদে কি নতুন ইতিহাস লেখা হবে? নাকি বিশ্বকাপে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত দ্বৈরথে অজেয়ই থাকবে ভারত? এই প্রশ্নের ঝাপটায় হারিয়ে গেছে আর সব কিছু।
এমনকি ১৯ নভেম্বর বিশ্বকাপ ফাইনালের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি গত কয়েক দিন। গতকাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের ইনিংস বিরতির সময়ও স্টার স্পোর্টসে বেশি সময় আলোচনা হয়েছে আহমেদাবাদের ম্যাচ নিয়ে। ম্যাচপূর্ব উত্তাপ এতই বেশি যে ডেঙ্গুতে শয্যা নেওয়া শুভমান গিলকে গতকাল ৯৯ শতাংশ ফিট ঘোষণা করেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ওদিকে ভিসাজট খুলে যাওয়ায় ৬০ ক্রীড়া সাংবাদিককে নিয়ে আহমেদাবাদের পথে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ।
তারও আগে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এক লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে হুড়াহুড়ি পড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত ১৪ হাজার টিকিট ছেড়েছে আয়োজকরা। মোটকথা, বিশ্বকাপ রোমাঞ্চ এখন পেছনের আসনে। চালকের আসনে আজকের ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ ছাড়া আর কিছু দৃশ্যমান নয়।
ফর্মের তুঙ্গে থাকা গিল আজ খেলেও ফেলতে পারেন। কিন্তু যাঁকে ভারতের ত্রাস মনে করে ক্রিকেট বিশ্ব, সেই শাহীন শাহ আফ্রিদিকে কি আজ খেলাবে পাকিস্তান? আগের দুই ম্যাচে আশানুরূপ নৈপুণ্য দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় শাহীন আফ্রিদির ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ম্যাচের ‘হাইপ’ বলছে ৮০ শতাংশ ফিট হলেও বাঁহাতি পেসারকে খেলাবে পাকিস্তান। আফ্রিদি নিজে তো খেলতে চাইবেনই।
পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম অবশ্য নিশ্চিত করেছেন, ‘ও (শাহীন) আমাদের প্রধান বোলার।
ও নিজেও বিশ্বাস করে যে সে বড় ম্যাচের বোলার।’ দলের অন্যদেরও টনিক দিয়েছেন তিনি, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বিশেষ কিছু। এমন যেকোনো ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং। আমি সবাইকে বলেছি, এটা নিজেদের মেলে ধরার সেরা সুযোগ। বিশাল স্টেডিয়ামে অসংখ্য দর্শকের সামনে নৈপুণ্য দেখানোর সুবর্ণ সুযোগ।’
২০১৯ বিশ্বকাপে এই সুযোগ এসেছিল বাবর আজমের সামনে। কিন্তু ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের সেই লড়াই তাঁর দল হেরেছিল ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে। আবার বাবরের নেতৃত্বেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-জুজু তাড়িয়েছিল পাকিস্তান। আগের পাঁচটি আসরে হারের পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের মলিন ইতিহাসের প্রসঙ্গ উঠতে দুবাইয়ের সেই জয়ের কথা মনে করিয়ে দেন বাবর, ‘আমরা কি টি-টোয়েন্টির রেকর্ডটা ভাঙিনি? আসলে আমি অতীত নিয়ে ভাবছি না।’
বরং বর্তমান নিয়ে ইতিবাচক থাকার রসদ আছে পাকিস্তান অধিনায়কের কাছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড জয়ে প্রত্যাবর্তনের দুর্দান্ত গল্প লিখেছে পাকিস্তান। ওপেনিং জুটির ধাঁধার সমাধান সেঞ্চুরি দিয়ে করেছেন আব্দুল্লাহ শফিক। মোহাম্মদ রিজওয়ানের ম্যাচজয়ী ইনিংস পুরো ড্রেসিংরুমে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। কিন্তু গ্যালারি ভরা সমর্থন তো পাবে ভারত। বাবর এতেও বিচলিত নন, ‘আমরা এমসিজির (মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড) মতো বড় মাঠে খেলেছি। এটা ঠিক যে, বেশির ভাগ সমর্থন ভারত পাবে। তবে ভালো হতো যদি পাকিস্তানের সমর্থকরা এখানে আসতে পারত।’
কাগজে-কলমে ভারত শক্তিতে এগিয়ে। ঘরের মাঠ আর কন্ডিশনও রোহিত শর্মাদের পক্ষে। সঙ্গে যদি এবারের বিশ্বকাপে আগের দুই ম্যাচের নৈপুণ্য যোগ করা হয়, তবে অবধারিতভাবে আজকের ফেভারিট ভারত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ধ্বংসস্তূপ থেকে জয়ের মঞ্চে ওঠা ভারত বিপজ্জনক। পাকিস্তানসহ বিশ্বকাপের বাকি সব দলের জন্যই আশঙ্কাজনক খবর এই যে, বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার ব্যাটে রান আছে। দলীয় ভারসাম্য নিয়ে কোনো দুর্ভাবনা নেই ভারতের।
দুর্ভাবনা শুধু একটা জায়গাতেই—প্রায় সমশক্তির দুটো দলের লড়াই নির্ধারিত হয় নির্দিষ্ট দিনের নৈপুণ্যে। কাগুজে শক্তি নয়—আজ শ্রেয়তর দলই জিতবে। আর নিজেদের দিনে ভারত যা, পাকিস্তানও তা।
তো, আজকের দিনটা কোন দলের হবে? বিশ্বকাপের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর প্রশ্ন সম্ভবত এটিই!
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন