২০১০ এশিয়ান গেমসে প্রথমবার ক্রিকেট জায়গা পায়। ছেলেদের বিভাগে সোনাও জেতে মোহাম্মদ আশরাফুলের দল, যা এই মঞ্চে বাংলাদেশের একমাত্র সোনার পদক। বলে রাখা ভালো, সেবার দলই পাঠায়নি ভারত। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা নামমাত্র দল পাঠিয়েছিল।
তখনো আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ না পাওয়া আফগানিস্তান জিতেছিল রুপা। ব্রোঞ্জ যায় পাকিস্তানে।
সেবার এশিয়ান গেমসের আসর বসেছিল চীনের গুয়ানজোতে। দেশটির বাজার ধরতে অনেক কৌশলে গেমসে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করেছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল।
সেই মিশনে সাফল্য মিলবে—এমন কোনো আলামত এখনো দৃশ্যমান নয়। তবে এশিয়ার ক্রিকেট পরাশক্তিদের সেবার দূরদর্শিতায় পেছনে ফেলেছিল বাংলাদেশ। শক্তিশালী দল পাঠিয়ে ছেলেদের বিভাগে সোনা আর রুপা এনে দিয়েছিলেন মেয়েরা। সঙ্গে মেয়েদের কাবাডিতে ব্রোঞ্জ মিলিয়ে তিনটি পদক নিয়ে ফিরেছিল বাংলাদেশ।
পদকের ভারে ওটাই বাংলাদেশের সফলতম এশিয়াড মিশন।
আন্তর্জাতিক কলিম্পক কমিটির সদস্য নিতা আম্বানি
এরপর সময় গড়িয়েছে, এশিয়ার ক্রিকেট পরাশক্তিরাও উপলব্ধি করেছে গেমসের পদকের মহিমা। পরের আসরগুলোয় বাংলাদেশের ব্রোঞ্জ জয়ে এর প্রভাব থাকতে পারে। এবার চীনের হাংজুতে এশিয়াডের জন্য যে দল পাঠিয়েছে ভারত, সেটি আইপিএল মানের। মাঠের ক্রিকেটেও সবাইকে দুরমুশ করে সোনা জিতেছে ভারত।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের নতুন শক্তি আফগানিস্তান জিতেছে রুপা। পরের এশিয়াডে কী হবে, কে জানে!
তবে সদ্যই বাজারে এসেছে অলিম্পিক। ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিস্তর দেনদরবারের পর এই লক্ষ্য অর্জনে যারপরনাই খুশি বৈশ্বিক ক্রিকেট সংস্থার চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে। হওয়ার কথা। কারণ অলিম্পিক হলো বিশ্বের সব খেলার মাথার ওপর রাখা ছাতা। বিশ্বকাপ ফুটবল সবচেয়ে ঝকমকে হতে পারে, তবে অলিম্পিকের মর্যাদা অন্য উচ্চতায়। এমন আসরে জায়গা পাওয়া যেকোনো খেলার জন্যই গৌরবের।
এই গৌরব বড় সুযোগ হয়েও এসেছে বাংলাদেশের সামনে। অলিম্পিকে কখনো পদক জেতেনি বাংলাদেশ, জেতার স্বপ্নও দেখেনি। অংশগ্রহণের মাধ্যমে অলিম্পিক আন্দোলনের সঙ্গী হতে পারাই প্রাপ্তি বাংলাদেশের। তবে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অভাবিত এক সম্ভাবনার দরজা খুলেছে বটে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতে ভারতের প্রতিনিধি নীতা আম্বানির উচ্ছল হাসিমুখ দেখে সেই সম্ভাবনার কথা বলতেও দ্বিধা হচ্ছে! সদ্যঃসমাপ্ত এশিয়ান গেমসে শক্তিশালী দল পাঠিয়েছে ভারত। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মালকিনের হাসি বলে দিচ্ছে, অলিম্পিকে আরো শক্তিশালী দল পাঠাবে ভারত। কারণ গেমসে পদকের জন্য বিশাল বিনিয়োগ করেছে দেশটি। এবারের এশিয়ান গেমসে পদকের ‘সেঞ্চুরি’র লক্ষ্য পূরণও করেছে দেশটি। তাতে ২০২৮ অলিম্পিকের জন্য যে এখনই গোছগাছ শুরু করবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে
শুধু ভারত কেন, অলিম্পিক পদকের জন্য ছুটবে স্বীকৃত সব ক্রিকেট দল। বয়সসীমা আছে। অনূর্ধ্ব-২৩ বয়সীদের সঙ্গে জাতীয় দলের তিনজনকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় গেমসের দলে। আইসিসির পূর্ণ সদস্য সব দেশের বেঞ্চেই পর্যাপ্ত খেলোয়াড় আছে। তাই ধরে নেওয়া যায়, ২০২৮ অলিম্পিকে ‘মিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ’ হবে লস অ্যাঞ্জেলেসে।
সব দল শক্তিশালী। আবার ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টির। হাতে এখনো অনেক সময় আছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুটিই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ওয়ানডে সবচেয়ে ভালো খেলে। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে উন্নতির বিস্তর জায়গা আছে।
২০২৮ অলিম্পিকের আগে বাংলাদেশের হাতে বিস্তর সময়ও আছে। সমস্যা হলো সেই সময়ের সদ্ব্যবহার করা নিয়ে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়ে ২০২৩—কথিত মহাপরিকল্পনা পূরণ হয় না বাংলাদেশের। আবার পরিকল্পনার পথে হাঁটতে গিয়ে বাংলাদেশ দল বুঝতে পারে, অন্যরা দৌড়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে! দ্রুতগতির টি-টোয়েন্টিতে উন্নতির পথে গতির ব্যবধান আরো বেশি। তাতে ২০২৮ সালে প্রথম অলিম্পিক পদক জেতা নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।
বরং ভয় হচ্ছে, অলিম্পিক ক্রিকেট বরণ করে নেওয়ায় ওয়ানডে ক্রিকেটের ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজতে বুঝি খুব বেশি বাকি নেই। অর্থকড়ির জন্য ক্রিকেটাঙ্গন ঝুঁকে টি-টোয়েন্টির দিকে। অলিম্পিক আন্দোলনের অংশ হওয়ার খুশিতে এবার মিষ্টিমুখের মতো করে টি-টোয়েন্টি আরো বেশি বেশি বিলি করবে আইসিসি এবং সব ক্রিকেট বোর্ড। তাতে ওয়ানডের জন্য ক্যালেন্ডারে সময়ই থাকবে না কোনো বোর্ডের। এভাবে একদিন হয়তো এক দিনের ক্রিকেট হারিয়েই যাবে। সেদিনের পর থেকে অনাদিকাল দীর্ঘশ্বাস শোনা যাবে—আহা, ওয়ানডে ফরম্যাটটা বাংলাদেশ ভালো খেলত। সেটাই আজ নেই! তাই অলিম্পিকে ক্রিকেটের জায়গা করে নেওয়ার খবর বাংলাদেশের জন্য ভালো নাকি মন্দ হলো—ঠিক নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না!
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন