রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।|
ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে একবারে মরা ভালো। সমগ্র ফিলিস্তিনি সে পথেই হাঁটছে। নিজভূমে অধিকার বঞ্চিত ফিলিস্তিনিদের কাছে এরচেয়ে উত্তম বিকল্প আর কী ছিলো? অপরাধের শতবছর, অন্যায়ের ৮০ বছর এবং পাপের ৬৯ বছরে ফিলিস্তিনের প্রত্যেক নাগরিকের ঘামের চেয়ে রক্ত ঝরেছে বেশি। প্রত্যেক মুহূর্ত কেটেছে শঙ্কায়। স্বস্তির ঘুম, শান্তির বিশ্রাম এসব শব্দ ফিলিস্তিনের গৃহে ধরা দেয়নি। বীর মায়েরাও যুগে যুগে সেখানে বারুদ জন্ম দিয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকাকে ভাজা ভাজা করেছে। আকসায় সেজদারত হাজার মুসুল্লিকে গুলি, লাথি, পিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে, জখম করেছে, বের করে দিয়েছে। মুসলিমদেরকে আকসার চত্বরে কপাল স্পর্শ থেকে বঞ্চিত করেছে বহুকাল।
স্বার্থবাদী পশ্চিমাদের মদদে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইয়াহুদিদের কাছে নির্যাতন-নিপীড়নের খড়গে পুড়ছে স্বভূমের ফিলিস্তিন। কোনঠাসা করতে পেরেছে বটে কিন্তু স্বাধীনতার তৃষ্ণা থেকে পবিত্রভূমির তরুণদের বিরত রাখা যায়নি। ইতিহাসে রক্ত দিয়েছে অথচ স্বাধিকার ফিরে পায়নি এমন নজির বিরল। অপেক্ষা হয়তো এটুকু দীর্ঘ হবে যে, এক প্রজন্ম আত্মাহুতি দেবে এবং পরের প্রজন্ম এর ফলভোগ করবে। আরবের বিষফোঁড়া হিসেবে ইসরায়েল মানবতা, শান্তি-সম্মৃদ্ধিতে যে পচন ধরিয়েছে তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ভোগাছে, পোড়াচ্ছে। ইসরাইলের অমানবিক আচরণে মদদ দিচ্ছে আমেরিকাসহ পশ্চিমাবিশ্বের বহুদেশ।
আমেরিকা পৃথিবীর যেথায় যেথায় হস্তক্ষেপ করেছে সেখানেই অশান্তির পতাকা উড়িয়েছে। নিজেদের স্বার্থে করতে পারে না এমন কোন হীন কাজ নেই যা তারা করতে পারে না। সর্বশেষ ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য এবং গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার জন্য রণতরী পাঠিয়েছে। গাজায় খাদ্যপানীয় প্রবেশের পথরুদ্ধ করে নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুদেরকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। অথচ এখানে তাদের মানবতার বুলি নাই। কালে কালে আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিধি লঙ্ঘনের এমন বহু ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। নয়তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের মত বর্বর গোষ্ঠীকে সাপোর্ট করতে পারে! ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সাথে যে আচরণ করেছে সেই আচরণ যুগযুগ ধরে ফিলিস্তিনের সাথে করছে।
গাজায় একটি প্রাণীকেও ওরা হয়তো বাঁচতে দেবে না। স্থাপনাগুলোকে বোমার আঘাতে ছাইভস্মে পরিণত করবে। অথচ ওরা ভুলে যাচ্ছে, স্বাধীনতার জন্য লড়াইকারীদের প্রেরণা এবং শক্তির উৎস এই ছাই। ছাইতেই পূর্বপুরুষের বীরবেশে মৃত্যকে আলিঙ্গন করার ছাপ আছে। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও এই পোড়ামাটি। সব অভিযোগ, সব অত্যাচার, সব নিপীড়ন একদিন উল্টো করে ফিরিয়ে দেয়া হবে। আরবের মুসলিম সম্প্রদায়গুলো যদি শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়াতো, তেল বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিতো তবে ইসরায়েলের তথাকথিত বাপদের জিহ্বা আরবের মরুভূমির বালু চাটতে বাধ্য হতো। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর যে অন্যায়-অবিচার যুগ-যুগান্তর জুড়ে চলছে তার জন্য আরববিশ্বের অনৈক্য বহুলাংশে দায়ী।
একদিন সমগ্র গাজা, আল আকসা, জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের হবে। একজন হিটলারের অপেক্ষায় থাকতে হবে। হামাসের উত্থান আশা জাগিয়েছে। শতবছরের ইতিহাসে হামাসের এই জাগরণ আশাবাদী করেছে। যদিও জীবন-মালের বহু খেসারত দিতে হবে তবুও অধিকার অর্জনের শেষধাপে পা না রাখা পর্যন্ত রক্তবিন্দু জমিনে ঢালতে হবে এবং অশ্রুবিন্দু আকাশে পাঠাতে হবে। সমগ্র বিশ্বের সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জনকারীরা ফিলিস্তিনিদের বেদনার ভার বোঝে। কাজেই চুড়ান্ত ইন্তিফাদার জন্য সর্বযুগেই অনেক মানুষ ফিলিস্তিনের হৃতাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য কথা বলবে, রাস্তায় নামবে। যে কিশোর কেবল ঢিল ছুঁড়তে শিখেছে সেও ফিলিস্তিনের সীমানায় দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের বুকে ঘৃণার একপ্রস্তর পাথর ছুড়বে।
একদিন ফিলিস্তিনের সব সংগ্রাম শেষ হবে। বৃদ্ধ বীরযোদ্ধা বায়তুল আকসায় আসরের নামাজ আদায়ের শেষে বিস্তৃত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে স্বাধীন কিশোরদের দৌড়ঝাঁপ দেখবেন। পরাধীনতার ব্যথা জন্মসূত্রে স্বাধীনতা প্রাপ্তরা বুঝবে না, অনুধাবন করতেও পারবে না। আমাদের প্রার্থণা হোক ফিলিস্তিনের জন্য। যদি কোনভাবে বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে সামান্য পরিমানেও দুর্বল করে দেয়া যায়-তা থেকে যেনো নিজেদেরকে বিরত না রাখি। প্রত্যেক প্রার্থনায় ফিলিস্তিনের যুদ্ধাহত শিশু, নির্যাতিত মা এবং যোদ্ধা পুরুষদের জন্য যেনো কল্যাণ কামনা করি। আকসার প্রাঙ্গনে আল্লাহু আকবার ধ্বনি আরও জোড়ালোভাবে উচ্চারিত হোক-সে প্রার্থণায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন