রেটের মূল্য নাই! রাষ্ট্রে  চাকুরিজীবী  কিংবা  জনতা-কেউতো আসলে ভালো নাই

রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।|

জনকল্যাণ এবং গণভোগান্তি বিবেচনা করে রাষ্ট্র মাঝে মাঝে কিছু পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়! তবে মহামতি ব্যবসায়ীগণ সে মূল্যের ধারেকাছেও ঘেঁষে না! তাদের মূল্যই দ্রব্যমূল্য! কে খেতে পেলো আর কে পেট শুকালো তাতে তাদের শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা নাই। তাদের দৌরাত্ম্যে জনতাকে নিয়ে রাষ্ট্রের কল্যাণ চিন্তা এখন জনবিস্ফোরণে রূপ নিচ্ছে। বাজারের গিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি দেখে ক্রেতার পকেটে যে দুর্গতি ভর করে তার রেষ স্বামী-স্ত্রীর বেডরুমেও রোষানলে ফেলে! পেকটভর্তি টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার না পাওয়ায় স্ত্রীগণ ইদানীং স্বামীর মুরোদ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে!  

 

কর্মের যতগুলো লক্ষ্য থাকে তার মধ্যে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় অন্যতম। তবে বেতনকাঠামোর শরীরের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যস্ফীতির শরীর দিনে দিনে ফুলছে। ফলাফলে দেহের পুষ্টি অপুষ্টিতে খাচ্ছে!  ডিম-মাছ-দুধে হাত দেয়াই কঠিন। মাংসের বাজারে ধণিক শ্রেণির বণিকেরা ঘোরাঘুরি করে!  একটু ভালো খেতে চাইলে, পরিবারের সদস্যদের সন্তুোষজনক রিজিক দিতে গেলে বেতন থেকে সঞ্চয় তো দূরের কথা বরং কোন কালে কোথাও কিছু যদি সঞ্চয় থেকে থাকে তাও ভাঙতে হচ্ছে। কর্মজীবীরা সারা মাসে হাড়ভাঙা খাটুনি করে যা দু'পয়সা রোজকার করে তা মাসের খাদ্য জোগাতেই ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে হয়!  তাও যদি নির্ভেজাল কিছু পাওয়া যেতো! 

 

এদেশে সরকারি চাকুরিজীবীদের নিয়ে মানুষের ভয়ানক এলার্জি আছে। জনতা ভাবে রাষ্ট্রের সবকিছু এড়াই লুটেপুটে খায়! সরকারি চাকুরিজীবীদের বাজারে কীভাবে ঠকানো যায়, স্লেজিং করে উসকে দেয়া যায়-তার সব আয়োজন পাকাপোক্তভাবে করা আছে! তাদের যা বেতন তা বউ-বাচ্চার নাগালে যায় না। সব টাকা বাজারে বাজারে ঘোরে। দিন দিন যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে সকল ধরনের চাকুরিতে রেশনিংয়ের দাবি উঠতে খুব বেশি  সময় বাকি নাই!  

 

রাষ্ট্রে  চাকুরিজীবী  কিংবা  জনতা-কেউতো আসলে ভালো নাই।  মহান ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে সবাই ধরাশায়ী হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র বলে ডিম ১২ টাকা বিক্রি করবা কিন্তু মহামতিরা বলে ১৫ টাকার কমে দিব না! কম পয়সায় ডিমের খোসাও ধরবা না!  আবার রাষ্ট্র যখন বলে বিদেশ থেকে আমদানি করবো!-তখন তারা চোখ রাঙায়। ভাবসাবে মহাত্মনরা বলে মঙ্গলগ্রহ থেকে আনলেও এদেশের বাজারে ছাড়তে হলে আমাদের হাতে আসবে! তোমার কর্মচারীরা কী বাজারে বাজারে ডিম বিক্রি করতে পারবে!  আসলে অসহায় কী ডিম নাকি বাজার সেই দুশ্চিন্তায় আজকাল মুরগিরা ঘুমাতে পারে না। 

 

ব্যবসায়ীদের কোথায় কোথায় খুঁটি  কিংবা তাদের হাতে এতো ক্ষমতা কোথা থেকে এলো!-এমন প্রশ্ন আজকাল উত্তরের ধার ধারে না! কোথায় তারা নাই! নুন থেকে চুনে-সর্বত্রে তাদের অবাধ বিচরণ! দিনে দিনে ব্যবসায়ীদের যেভাবে নীতিহীন দৌরাত্ম্য বাড়ছে তাতে রাষ্ট্র বিপদে পড়তে পারে! পেটের ক্ষুধায় যারা দৌড়ায় তারা মনের ক্ষুধায় দৌড়ানোদের চেয়ে শক্তিশালী ও হিংস্র হয়। বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধার্তরা-পুষ্টিহীনরা হৃষ্টদের অনেক কিছুই গিলে ফেলতে পারে!  কাজেই সাঁঝের দিকে ধাবিত হওয়া ঠিক হবে না। আজকাল কম কম খাওয়াতে জনতার বেশি বেশি ক্ষুধা লাগে! তারা যখন অন্যদের সামনে অনেক খাবার দেখে তখন ক্রোধান্বিত হয়। তাদেরকে বেশি বেশি কথা খাওয়াতে গেলে, তাদের সামনে বয়ান মারতে গেলে মহাবিপদ ঘটতে পারে! বাজার পরিস্থিতি ভালো না!  না তরলের না কঠিনের!  দিন দিন সমীকরণ জটিল হচ্ছে। 

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন