জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গাছ পাচারের অভিযোগে বদলী করা হয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে। এ রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে উদ্যানের বেশকিছু মূল্যবান প্রজাতির পুরনো গাছ পাচারের অভিযোগ উঠে। ফলে হুমকির মুখে পড়ে জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী। গাছ চুরির সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর রবিবার ঢাকা অফিস থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেনের বদলীর আদেশ হয়। শুরু হয়েছে তদন্ত কার্যক্রমও।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের একটি সিন্ডিকেট চক্র রাতের আঁধারে উদ্যানের বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ চুরি করে আসছে। এসব গাছ চুরির সাথে বদলী হওয়া এই রেঞ্জ কর্মকর্তার যোগসাজষ ছিল বলে অভিযোগও রয়েছে। বনের টিলা থেকে পুরনো ও মূল্যবান প্রজাতির গাছ কেটে খন্ডাংশ করে পাচার করে। বাঘমারা ক্যাম্পের সম্মুখে ও মুজিবের উঠনি টিলা, খাসিয়া পুঞ্জির পিছনে আগর বাগান, কালাছড়া বনবিট এলাকাসহ বনের বিভিন্ন অংশে গত কয়েক মাসে প্রায় দু’শতাধিকেরও বেশি গাছ কেটে পাচার করা হয়েছে। কয়েকটি টিলায় কেটে নেয়া গাছের গোড়া পরিত্যক্ত পাওয়া গেছে।
গাছ পাচারের বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা কাউকে তোয়াক্কা করেননি। নিজের ইচ্ছেমতোই কো-ম্যানেজমেন্ট দলের কতিপয় সদস্যদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালিয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলেন ও সাংবাদিকদেরও কটাক্ষ করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ রেঞ্জ কর্মকর্তাকে বদলীর আদেশ দেন। গাছ পাচারের অভিযোগ বিষয়ে শ্রীমঙ্গলস্থ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান সরেজমিন লাউয়াছড়ায় তদন্ত শুরু করেছেন।
পরিবেশ কর্র্মীসহ স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সমৃদ্দ লাউয়াছড়ায় গাছ চুরি হওয়ায় বনের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। হুমকির মুখে পড়েছে বন্যপ্রাণী। তাদের খাবার ও আবাসস্থল সংকট দেখা দিচ্ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের অস্থিত্ব রক্ষায় এসব অসাধু বনকর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে তারা দাবি করেন। তবে স্বল্প জনবলের কারণে বনের বিশাল এলাকা দেখভাল করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে দাবি করছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। তাদের মতে ৩০ জন লোকবলের বিপরীতে আছেন মাত্র ১২ জন। এদের সাথে দেখাশুনায় কিছু সিপিজি অর্থাৎ বন টহল দল থাকলেও বর্তমানে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব টহল দলের কিছু অসাধু লোকও গাছ চুরির সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় সহকারী বন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, তদন্ত করে দেখছেন আরও গাছ চুরি হয়েছে কি না।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেনের বদলির আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকা অফিস থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তার বদলীর আদেশ হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন