ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্মরণকালের নজিরবিহীন বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে হোয়াইট হাউজের অদূরে এবং ওয়াশিংটন মনমেন্টের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বস্তরের প্রায় অর্ধ লক্ষ মুসলিম নর-নারী অংশ নেন বলে বিক্ষোভে অংশগ্রহকারীরা দাবী করেন। খবর ইউএনএ’র।
ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম অর্গানাইজেশনস এর আয়োজনে ‘আমেরিকান মুসলিম ফর প্যালেস্টাইন’ (এএমপি) শীর্ষক এক বিক্ষোভ সমাবেশে ওয়াশিংটন ডিসি’র টাইষ্ট্রেট রাজ্য ও নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্য থেকে বিখোভকারীরা অংশ নেন। ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘মুক্ত ফিলিস্তিন চাই’ ও ‘গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করো’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভকারীরা সমাবেশে অংশ নিয়ে গগণবিদারী শ্লোগানে ওয়াশিংটনের আকাম-বাতাসে ধ্বনি তুলেন। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশের মূল কর্মসূচী চলে। তবে সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা ওয়াশিংটন মনমেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বেলা দেড়টার দিকে মিছিলে অংশ নেয়। মিছিলটি সুবিশাল কনস্টিটিউশন এভিনিউ ঘুরে সমাবেশ স্থরে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশ স্থলের খোলা মঞ্চে বাংলাদেশী মুসিলিম কমিউনিটির সবচেয়ে বড় সংগঠন মুসিশ উম্মাহ অব আমেরিকা (মুনা)-এর নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম অর্গানাইজেশনস এর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে ডেমোক্র্যাট দলীয় একাধিক নেতা অংশ নিয়ে তাদের সমর্থন জানান। সমাবেশে বক্তারা ইসরাইলের বর্বরতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের দাবী জানানোর পাশাপাশি স্বাধীন প্যালেস্টাইন, আমেরিকানদের ট্যাক্সের অর্থ বাইডেন প্রশাসনকে ইসলাইলের সমর্থনে প্রদান না করা সহ অন্যান্য দাবী জানান।
এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং সাহায্যে আহ্বানে জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ নিউইয়র্কে বিক্ষোভ করেছে। শুক্রবার ম্যানহাটনের ব্রায়ান্ট পার্ক থেকে সেন কার্স্টেন গিলিব্র্যান্ডের অফিস পর্যন্ত এই বিভোক্ষে অংশ নেয় নিউইয়র্কের সাধারণ জনগন। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা বন্ধের জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশ জানায়, এদিন ইস্ট সাইডে গিলিব্র্যান্ডের অফিসের বাইরে ট্রাফিক অবরোধের কারণে ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের প্রাথমিকভাবে একটি বাসে আটক করে রাখা হয়। বিক্ষোভকারীরা দখলদার ইসরায়েলে অর্থায়নের জন্য সিনেটরদেরও দায়ী করেন। বিক্ষোভ থেকে ইসরায়েলকে কংগ্রেস কর্র্তৃক আরো ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদানের নিন্দা জানানো হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইউএস সিনেটের লিডার সিনেটর (নিউইয়র্ক) চাক শুমার এবং জিলি ব্র্যান্ডের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেন। সে সময় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সিটি কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ, কাউন্সিল ওম্যান টিফানি ক্যাবান, স্টেট অ্যাসেম্বলি ম্যান জোহরান মামদানীসহ দেড় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
নিউইয়র্ক সিটি ডেমক্র্যাটিক সোস্যালিস্টস অব আমেরিকা, আদাল্লাহ জাস্টিস প্রজেক্ট, মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি, মুসলিম ডেমক্র্যাটিক ক্লাব, বাংলাদেশী আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম (বাপ), দেশীজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং, জুইশ ভয়েস ফর পীস, ইয়াল্লা ব্রুকলীন, ইকনাসহ দেড় ডজনের অধিক সংগঠন এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানী জানান, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ৬৬% আমেরিকানই চাচ্ছে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধ বিরতি। কিন্তুজো বাইডেন প্রশাসন আমেরিকানদের দাবী অগ্রাজ্য করে গাজায় অভিযান চালানোর জন্যে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। এটা মেনে নেয়া যায় না।
অপরদিকে গাজায় অস্ত্রবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সামনে মুসলিম কমিউনিটির হাজারো মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। শুক্রবার নিরীহ ফিলিস্তিনিদের দোয়া কামনায় হৃদয়স্পর্শী এই দৃশ্যের অবতারণা হয় কংগ্রেস ভবনের সামনে। বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা জমায়েত হন জুমার নামাজ আদায়ে। অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রবিরতি কার্যকরের দাবি জানান তারা। এ সময় প্ল্যাকার্ড হাতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান। একই সাথে দুর্দশা কবলিত অঞ্চলটিতে ত্রাণ সহায়তা চালু করতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানান মুসলিমরা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন