হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্র-ইরান দ্বৈরথ জোরালো হচ্ছে

ইসরায়েল ও হামাসের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার দ্বৈরথ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সমরশক্তি বৃদ্ধি ও ইসরায়েলকে সমর্থনের জবাবে ইরানের দিক থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেওয়ার গুঞ্জন উঠছে। ওয়াশিংটন সর্বশেষ অভিযোগ করেছে, তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে পরিচালিত আক্রমণে মদদ দিচ্ছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি সোমবার বলেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিগত সপ্তাহ ধরে যে আঞ্চলিক উত্তেজনা চলছে, মার্কিন স্বার্থের হুমকি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

 

গত বুধবারের পর ইরাকে তিন ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা অবস্থানে হামলা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন কর্মকর্তাদের ইরাক ছাড়তে বলেছে মার্কিন প্রশাসন। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন গোষ্ঠী ইরানের সক্রিয় সমর্থন নিয়ে মার্কিন ঘাঁটি ও সামরিক সুবিধায় রকেট ও ড্রোন হামলা করছে। অন্যদিকে লেবানন থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট ছুড়ছে।

 

আন্ত সীমান্ত সংঘাতের কারণে ইসরায়েল লেবানন আক্রমণ করে বসতে পারে, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। ইসরায়েল অভিযোগ করছে, ইরানের মদদপুষ্ট হিজবুল্লাহ বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে। অন্যদিকে গাজা থেকে হামাসের অতর্কিত ও অপ্রত্যাশিত আক্রমণ আসার পর ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র দুটি বিমানবাহী রণতরি ভূমধ্যসাগরে পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে দুই হাজারের মতো নৌ সেনা মজুদ রেখেছে।

 

এ অবস্থায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গত সপ্তাহে বলেন, জায়নবাদী শাসনের অপরাধ অব্যাহত থাকলে মুসলিম এবং অন্যান্য প্রতিরোধ বাহিনী অধৈর্য হবে এবং কেউ তাদের রুখতে পারবে না। সোমবার জন কারবি আরো বলেন, ইরান ধারাবাহিকভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের আক্রমণগুলো নিবিড়ভাবে দেখাশোনা করছে ইরান। অনেক ক্ষেত্রে তেহরান সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা দিয়ে এসব হামলায় ভূমিকা রাখছে এবং ইরানি স্বার্থে অন্য অনেককে সংঘাতে জড়াতে উসকানি দিচ্ছে। ইরান অবশ্য এসব প্রায়ই অস্বীকার করার মনোভাব দেখায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তা গ্রহণ করবে না।

 

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের সমর্থনপুষ্ট বেশ কয়েকটি বাহিনী রয়েছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে ইয়েমেনের হুতি তাদের সমর্থনপুষ্ট। ইরাক ও সিরিয়ার মাটিতে আরো কিছু ছোট ছোট সশস্ত্র যোদ্ধাদল রয়েছে, যারা ইরানের সমর্থন পায়। এমনকি সুন্নি মতাদর্শের হওয়া সত্ত্বেও হামাস তাদের সমর্থন পাচ্ছে। আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের ব্যাপারটি নিয়ে আগে থেকেই কোনো রাখঢাক রাখে না। গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইরানের আইনসভার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রধান ভাহিদ জালালজাদেহ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হামাস, প্যালেস্টাইন জিহাদ এবং হিজবুল্লাহর যোগাযোগ চলছে। তাদের (সশস্ত্র গোষ্ঠী) কথা পরিষ্কার, তারা আমাদের কাছ থেকে কোনো সামরিক অভিযান প্রত্যাশা করে না।’

সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেন, তেহরান এই অঞ্চলের ‘প্রতিরোধ বাহিনীগুলোকে’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেয় না কিংবা থামতেও বলবে না এবং ওই সব গোষ্ঠী নিজ নিজ দেশের অবস্থা বিবেচনা করে নিজেদের স্বার্থেই কাজ করে।

অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের মনোভাব নিয়ে সব সময় দৃঢ়তা দেখানো যুক্তরাষ্ট্র ইরানের এসব তৎপরতার বিরুদ্ধে আগ্রাসী নীতি গ্রহণের দিকেই রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন যৌথভাবে জানান, তাঁদের ধারণা, ইরান তার সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠীদের (প্রক্সি ফোর্সেস) মাধ্যমে হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে জড়াবে। তবে এর দ্বারা আমেরিকান সেনা কিংবা সামরিক সুবিধার কোনো ক্ষতি হলে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।

ব্লিনকেন বলেন, ‘আমরা চাই না সংঘাত ছড়াক। কিন্তু আমাদের বাহিনী হামলার মুখে পড়লে তার জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’ অস্টিনও একইভাবে বলেন, মার্কিন বাহিনী ও সুবিধাকে কেন্দ্র করে হামলা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। 

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন