দলের অন্দরমহলের খবর—২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার যে রোডম্যাপ ভেবেছিল, তার দুটি এরই মধ্যে ‘ফ্লপ’ করে গেছে। হিসাবটা ছিল এ রকম—অন্তত ছয়টা ম্যাচ জিততে হবে। সম্ভাব্য ছয় প্রতিপক্ষের দুটির কাছে হার হয়েছে। পুরনো ছকের ম্যাচ বাকি আছে তিনটি— নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে থেকে একটি।
তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসা তাসকিন আহমেদকে বাকি সব ম্যাচ জয়ের নতুন বাজি ধরতে হয়েছে। আছেই চারটা ম্যাচ। এর সবগুলো না জিতলে সেরা চারে নাম লেখানো অসম্ভব যে! দুরূহ এই মিশন আজ নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়ে শুরু করছে বাংলাদেশ দল। কলকাতার এই ম্যাচটি অনায়াসে জেতার কথা সাকিব আল হাসানদের।
কিন্তু পাঁচ ম্যাচের চারটা হেরে বসায় অনুসারীরা ইদানীং চোখে ‘কমলা ফুল’ও দেখছেন। নইলে এক সংবাদকর্মী তাসকিনকে প্রশ্ন করবেন কেন, ‘এই ম্যাচটা (নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে) কি খুব ট্রিকি মনে হচ্ছে?’ ঝুঁকি আছে। ক্রিকেটে আগাম ঘোষণা দিয়ে ম্যাচ জেতার নিশ্চয়তা নেই। বিশ্বকাপের মাঠে ঝড় তোলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস।
আবার তারাই অস্ট্রেলিয়ার কাছে গুটিয়ে গেছে মাত্র ৯০ রানে। ১৯ নভেম্বরের ফাইনালে ভারতের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ধরা হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। কিন্তু সেই ইংল্যান্ডের এমন হাল যে পারলে দলটির টি-টোয়েন্টি শিরোপাও কেড়ে নেন সমালোচকরা। এমন উত্থান-পতনের বিশ্বকাপে তাই ডাচরাও যখন যাকে খুশি হারিয়ে দেওয়ার হুংকার ছাড়ে, নীরবে শুনতে হয়। বাংলাদেশের কাছে হার নিয়ে আফগানিস্তানের দীর্ঘশ্বাসে যুক্তি খুঁজে পায় অনেকে।
তাসকিনের সংবাদ সম্মেলনের পর কলকাতার এক প্রবীণ সাংবাদিক তো ধরেই বসলেন ঢাকার এক নামি সাংবাদিককে, ‘দাদা, আমি তোমার সব লেখা খুঁটিয়ে পড়ি। কিন্তু আফগানিস্তানকে হারানোর পর তুমি যেভাবে আশার কথা লিখেছ, আমার ভালো লাগেনি। তোমার কেন মনে হয়েছিল যে আফগানিস্তানকে হারিয়েই বিশ্বজয়ের পালে হাওয়া লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ?’ যতই তাঁকে বোঝানো হয় লেখাটার মানে বুঝতে ভুল হচ্ছে, কিন্তু তিনি নাছোড়। প্রথম ম্যাচের পর বাংলাদেশ যে মানের ক্রিকেট খেলেছে, তাতে তাঁকে বোঝাতে গিয়ে সময় নষ্ট করার মানে নেই। এই বিশ্বকাপের বাংলাদেশকে কেউ সে অর্থে হুমকিই মনে করছে না।
আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গড়বড় হলে এই নিম্নচাপ আরো ঘনীভূত হবে। বাইরের নিন্দামন্দ আর কদিনের ব্যাপার? প্লে-অফ শুরু হয়ে গেলে স্টার স্পোর্টসের কোনো বিশেষজ্ঞের ভাবনায়ও থাকবে না বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যর্থতার এই গ্লানি তীব্র স্রোত হয়ে আছড়ে আছড়ে পড়বে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায়। বাংলাদেশের দলের নবীনতম ক্রিকেটারও জানেন। জানেন বলেই আপাত সহজ নেদারল্যান্ডস ম্যাচই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কঠিনতম পরীক্ষা। এই ম্যাচ জয় অর্জনের খাতায় লেখা হবে না। কিন্তু উল্টো হলে সম্ভাব্য পরিণতি জানেন তাসকিন, ‘ম্যাচ হেরে গেলে আসলে সবই ট্রিকি লাগে। এ রকম ম্যাচে আরো চাপ থাকে কারণ, সবার প্রত্যাশা বেশি থাকে। জিততে চাই সব ম্যাচই। হয়তো বলে-কয়ে জিততে পারব না। প্রক্রিয়া মেনে আমরা সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে জিতব ইনশাআল্লাহ।’
আফগানিস্তান ম্যাচ বাদ দিলে বাংলাদেশ দলে বহুল চর্চিত প্রক্রিয়ার প্রতিফলন মাঠে ঘটেনি। উল্টো ব্যাটিং অর্ডারে ওলটপালট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সমালোচনা শুনতে হচ্ছে এই সেদিনও প্রশংসায় ভাসতে থাকা দলের পেস বোলিং ইউনিটকে। তাসকিন অকাতরে স্বীকারও করেছেন, ‘আমাদের ফিল্ডিং ভালো হচ্ছে। কিন্তু ব্যাটিং-বোলিংয়ে আমরা ভালো করতে পারছি না।’ এর ফল শুধু টানা হার নয়, হারের ধরনে বাংলাদেশ দলের ওপর চরম আস্থাহীনতাও তৈরি হয়েছে।
ওদিকে নেদারল্যান্ডসের হারানোর কোনো ভয় নেই। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবার দেশে পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হয়েছেন স্কট এওয়ার্ডসরা। এই বিশ্বকাপে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ক্রিকেট খেলা প্রোটিয়াদের হারানো দল বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। এডওয়ার্ড আজকের জন্য বাড়তি উজ্জীবনীও পেয়েছেন, ‘রায়ান (কুক) বাংলাদেশ দলের সব দুর্বলতার কথা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।’ এই দক্ষিণ আফ্রিকান এখন ডাচদের কোচ, যিনি একসময় বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ ছিলেন।
এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুর্বলতা অবশ্য খুল্লাম খুল্লা—ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে নিজেদের সামর্থকেও ছুঁতে পারছে না। তবে আজকের ম্যাচে নিজের খেলা নিশ্চিত করে তাসকিন আশাবাদী, ‘আমরা যা খেলছি, তা আমাদের সামর্থের ধারেকাছেও নয়। যেগুলো ভালো হয়নি, সেখানে যদি ১০-১৫ শতাংশও উন্নতি করতে পারি, তাহলে জেতার সুযোগ আসবে।’
আজ উন্নতির সিঁড়ির খোঁজ যদি বাংলাদেশ পেয়ে যায়, তবে ইডেনে প্রথম ওয়ানডে খেলার স্মৃতি রোমন্থন করার উপলক্ষ পাবেন তাসকিনরা। এর দুই দিন পর নড়বড়ে পাকিস্তান—কাঙ্ক্ষিত ফল মিললে ঝিমুনি ধরানো মেইল ট্রেন ছেড়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে উঠেও পড়তে পারে বাংলাদেশ।
কলকাতা থেকে দ্রুতগামী রাজধানী এক্সপ্রেসের গন্তব্য দিল্লি, যেখানে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবেন সাকিবরা। বিশ্বকাপপূর্ব ‘নীলনকশা’য় দলটির নাম ছিল, এখনো থাকার কথা। তবে আপাতত আজকের ইডেনেই ভাগ্য নির্ধারণী বাংলাদেশ দলের।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন